খুনিরা সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের পিছু নিয়ে তিনবার কলকাতা যান
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে দীর্ঘ সময় ধরে অনুসরণ করছিলেন খুনিরা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিনবার কলকাতায় যান আনোয়ারুল। প্রতিবারই কাছাকাছি সময়ে অথবা একই তারিখে খুনিরাও কলকাতায় আসা-যাওয়া করেন।
আনোয়ারুল খুনে সম্পৃক্ত হিসেবে পুলিশ যাঁদের নাম পেয়েছে, তাঁদের বাংলাদেশ ও ভারতে যাওয়া-আসার নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, দুবার ব্যর্থ হয়ে তৃতীয়বার দীর্ঘ পরিকল্পনা করে আনোয়ারুলকে খুন করতে সক্ষম হন খুনিরা।
পুলিশের কাছে থাকা নথির তথ্য বলছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রথম কলকাতা যান ১৯ জানুয়ারি। এর ঠিক এক দিন আগে ১৮ জানুয়ারি খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শনাক্ত হওয়া আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন কলকাতা যান। একই দিনে আনোয়ারুলকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়াও কলকাতায় যান। এর দুদিন পর কলকাতায় যান ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা শিলাস্তি রহমান।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীম ২৪ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। এর ছয় দিন পর ৩০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন আক্তারুজ্জামান। শিলাস্তি রহমানও একই তারিখে কলকাতা থেকে ফিরে আসেন। আক্তারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। এর আগে ১৯ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন শিমুল ভূঁইয়া।
ভারতে যাওয়া ও বাংলাদেশে আসার সময় শিলাস্তির সঙ্গে চেলসিয়া চেরি নামের আরেক নারীও ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। চেলসিয়া গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর আক্তারুজ্জামানের সঙ্গেও ভারতে গিয়েছিলেন। এরপর ২৬ ডিসেম্বর আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
পুলিশের কাছে থাকা নথির তথ্য বলছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রথম কলকাতা যান ১৯ জানুয়ারি। এর ঠিক এক দিন আগে ১৮ জানুয়ারি খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শনাক্ত হওয়া আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন কলকাতা যান।
গত ১৮ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো কলকাতায় যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। এর ঠিক দুই দিন আগে ১৬ মার্চ কলকাতায় যান আক্তারুজ্জামান। ১৯ মার্চ আনোয়ারুল দেশে ফিরলে একই দিনে আক্তারুজ্জামানও দেশে ফেরেন। ৬ মার্চ কলকাতায় যাওয়া শিমুল ভূঁইয়াও ১৯ মার্চ দেশে ফিরে আসেন।
সর্বশেষ ১২ মে দর্শনা সীমান্ত হয়ে কলকাতায় যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। পরদিন কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তাঁকে খুন করা হয়। এর আগে ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান, শিমুল ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান ঢাকা থেকে কলকাতা যান। ১০ মে বাকি দুজনকে রেখে দেশে ফেরেন আক্তারুজ্জামান।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আনোয়ারুল আজীমের বন্ধু আক্তারুজ্জামান দেশে ফেরার আগে হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। এ খুনের ঘটনায় নাম আসা মুস্তাফিজুর রহমান ফকির নামের আরেকজনকে তিনি কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে রেখে আসেন। মুস্তাফিজুরের পাসপোর্টের ছবি দিয়ে সঞ্জিভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটের মালিককে ৯ মে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি লেখেন, ‘এই ব্যক্তি এখানে ২-৩ দিন অবস্থান করবে। আমি আগামীকাল (১৩ মে) চলে যাচ্ছি।’
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীম ২৪ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। এর ছয় দিন পর ৩০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন আক্তারুজ্জামান। শিলাস্তি রহমানও একই তারিখে কলকাতা থেকে ফিরে আসেন।
এর আগে মুস্তাফিজুর রহমান এবং ফয়সাল আলী সাজী ২ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যান। আনোয়ারুলকে খুনের পর ১৯ মে দেশে ফিরে আসেন। ২০ মে আক্তারুজ্জামান ঢাকা থেকে ভিস্তারা এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু চলে যান। এরপর কাঠমান্ডু থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে তিনি দুবাই যান। বর্তমানে তাঁর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
লাশ উদ্ধার হয়নি, ভিডিওকলে জিজ্ঞাসাবাদ
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল খুনের ১৫ দিনেও উদ্ধার হয়নি লাশ। তদন্তকারীদের কাছে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জানিয়েছেন, হত্যার পর আনোয়ারুলের লাশ টুকরা টুকরা করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতার পুলিশ লাশের খণ্ডিতাংশের সন্ধানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জিরানগাছা বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে বাংলাদেশের তিন সদস্যের গোয়েন্দা দল এখন কলকাতায় অবস্থান করছে। সোমবার আনোয়ারুলের খুন হওয়া ফ্ল্যাটে যান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার। ঢাকায় ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে কলকাতায় ভিডিওকলে সংযুক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
ডিবি সূত্র জানায়, এই চার আসামির কাছে থেকে খুনের বর্ণনা শোনেন ঢাকার গোয়েন্দারা। তা ছাড়া ভিডিওকলে খুনের স্থান ও লাশ গুমের প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কলকাতার পুলিশের সঙ্গে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছেন।