রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা বারিধারায় দায়িত্ব পালনকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হককে খুব কাছ থেকে গুলি করেন আরেক কনস্টেবল কাওছার আলী। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, কাওছার ও মনিরুল একসঙ্গে ফিলিস্তিন দূতাবাসে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাইরে দাঁড়িয়ে কে কতক্ষণ দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে মনিরুলকে এলোপাতাড়ি গুলি করেন কাওছার।
শনিবার দিবাগত রাতে ফিলিস্তিন দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মীদের কক্ষের বাইরে এই গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পথচারী জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি গুলশানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত মনিরুলের ভাই পুলিশ কনস্টেবল মাহাবুবুল হক বাদী হয়ে আজ গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় আসামি কাওছারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নিহত মনিরুলের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায়। আর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় আসামি কাওছারের বাড়ি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, মনিরুল ও কাওছার ফিলিস্তিন দূতাবাসের কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী একজন ছিলেন কক্ষের ভেতরে। আরেকজন বাইরে। কাওছার চাকরিতে মনিরুলের চেয়ে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি চাইতেন মনিরুল তাঁকে সম্মান করুক। কিছুটা বেশি সময় বাইরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করুক। কিন্তু মনিরুল সেই কথা শুনতেন না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরুলকে গুলি করেন কাওছার।
মনিরুলকে গুলির ঘটনার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এতে দেখা গেছে, দূতাবাসের ফুটপাতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন মনিরুল। সেখানে একটি কক্ষ থেকে অস্ত্র হাতে বেরিয়ে মনিরুলকে খুব কাছ থেকে গুলি করেন কাওছার। একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান মনিরুল। তখন আরও কাছে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর রাস্তায় পড়ে থাকা মনিরুলের অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে কক্ষের দিকে ফিরে যান কাওছার।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কাওছারের সঙ্গে থাকা অস্ত্রটি গুলিভর্তি ছিল। শুরু থেকেই তিনি অস্ত্রটির ‘ট্রিগার’ ধরে ছিলেন। এতে অনেকগুলো গুলি লাগে মনিরুলের বাঁ চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে। কাওছারের কাছ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম প্রথম আলোকে বলেন, কাওছারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মনিরুলের মরদেহ এখনো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হবে। তারপর ময়নাতদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মামলার বাদী মাহাবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলি করে আমার ছোট ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আইনগতভাবে দায়ী ব্যক্তির শাস্তি চাই।’