সেই হেলমেটধারীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নাহিদ হোসেনকে কোপাতে দেখা যায়। গত মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: ডেইলি স্টার

হেলমেট পরা এক যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কোপাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও দুই দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। তবে হেলমেটধারী যুবককে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হেলমেটধারী যুবক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী—এটুকু মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে মঙ্গলবারের সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি হাতে অংশ নেওয়া অন্য ১২ জনকে শনাক্ত করা গেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে হামলাকারী হিসেবে যাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ঢাকা কলেজের ছাত্র, নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা রয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাঁদের পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করতে চাইছেন না।

এখনও অস্ত্রধারী কারও পরিচয় নিশ্চিত করেন পুলিশ

এদিকে দোকান কর্মচারী মোহাম্মদ মোরসালিন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মোরসালিনের (২৬) ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে এই মামলা করেন। এ নিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় মোট চারটি মামলা হলো। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি। আর চার মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৪ জনকে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা একটি মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের সবাই বিএনপির নেতা–কর্মী।

আরও পড়ুন

গত সোমবার রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের দুই কর্মীর বিতণ্ডা থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত। এর জের ধরে মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীর মিরপুর সড়কের নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন বিপণিবিতানের দোকানমালিক–কর্মচারী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দুজন। গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন। তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আর গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে মারা যান ঢাকা নিউমার্কেটের একটি দোকানের কর্মী মোহাম্মদ মোরসালিন। তাঁর মাথায়ও আঘাতের গভীর ক্ষত ছিল।

এদিকে নিউমার্কেট থানায় হওয়া চারটি মামলার মধ্যে নাহিদ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা রমনা বিভাগে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। আর মোরসালিন হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও বিস্ফোরক আইনে করা তিনটি মামলার তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানার পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শরীফ মো. ফারুকুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁরা যা জানতে পেরেছেন, সেটি হলো প্রথমে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা নাহিদকে শিক্ষার্থী মনে করেছিলেন। পরে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই পেটানো হয়। একপর্যায়ে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। নিউমার্কেটে দুই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

নাহিদ হত্যা মামলা তদন্ত করছে ডিবির রমনা বিভাগ। এ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলাকে বলেন, হেলমেট পরা ব্যক্তিরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলে মনে হচ্ছে। হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্তে কাজ চলছে।

ব্যবসায়ী-দোকান কর্মচারী–হকারদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় গত মঙ্গলবার ও বুধবার নিউমার্কেটসহ আশপাশের সব বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। বুধবার সংঘর্ষ না হলেও দুই পক্ষে উত্তেজনা থাকায় দোকান খোলেননি ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার রাতে ছাত্রদের সঙ্গে সমঝোতার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউমার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলো খুলেছে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেখানকার বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

রাজধানীর আদাবর থেকে গতকাল নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী জাহানারা পারভীন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দু-তিন আগেই এখানে আসার চিন্তা ছিল। কিন্তু গন্ডগোলের খবর শুনে আর আসিনি। গন্ডগোল থামায় কেনাকাটা করতে এলাম।’