সংখ্যালঘু নির্যাতনে প্রতিকার নেই

বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশের নানা স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছিল। আর নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের গত এক বছরের শাসনামলেও সারা দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ৭৬১টি বাড়িঘর, ১৯৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং ২৭৪টি মন্দির-উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ তথ্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)।
এর আগের তিনটি নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাবলিরও আইনি প্রতিকার এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী ব্যাপক সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কতিপয় ঘটনায় মামলা করে বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু তা বেশি দূর এগোয়নি। কোনো অপরাধী শাস্তি পায়নি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রায় দুই দশক ধরে শুরু হয়েছে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা। এসব ঘটনার কোনো কোনোটিতে মামলা হয়। উচ্চ আদালতে রিট হয়। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও কিছু নির্দেশনা দেন। কিন্তু অপরাধী শাস্তি পায় না। ঘটনা ব্যাপক হলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন কিছু সরকারি সহায়তা পান। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি মেলে না।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কয়েকজন নেতা বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাবলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ঘটনা ঘটেই চলেছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের বিচার করার সরকারি হুঁশিয়ারি, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পাশে দাঁড়ানোর কিছু পদক্ষেপ সত্ত্বেও ঘটনা থামছে না। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু সাম্প্রদায়িক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো এতই ছোট মনে হয় যে এর প্রতিকারে কোনো পক্ষই উদ্যোগী হয় না। কিন্তু এভাবেই সংখ্যালঘুদের ভিত নড়বড়ে করে তোলা হচ্ছে।
ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। এর পেছনে দেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করার সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার নির্বিকার। রাজনৈতিক দল নিষ্ক্রিয়। নাগরিক সমাজও সোচ্চার নয়।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, এখন সময় এসেছে এসবের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদেরই ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর। এর অংশ হিসেবে ২৩ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজনের সঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ছাড়াও দেশের পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোও যুক্ত হয়েছে। ওই সমাবেশ থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঐকমত্যের দাবিনামা পেশ করা হবে।
সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদের কয়েকজন নেতা বলেন, প্রতিবছর গড়ে ৯০ হাজার ধর্মীয় সংখ্যালঘু দেশ ত্যাগ করছে। ২০০১ ও ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য পাশাপাশি রেখে দেখা যায়, ১৫টি জেলায় ১০ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে। অন্য জেলাগুলোতেও যে হারে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তা পায়নি।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০০১ সালে নেমে আসে ১০ দশমিক ৪ শতাংশে। ২০১১ সালে এ সংখ্যা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।