ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ‘পেশাদার খুনি’ সুমন শিকদার ওরফে মুসা এখন ওমানে রয়েছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি দুবাই থেকে ওমানে যান।
পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো বলছে, ওমানের পুলিশের মাধ্যমে মুসার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্যুরোর সহকারী মহাপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর উদ্যোগী হয়ে ওমানের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এখন তাদের মাধ্যমে মুসাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মুসার বিষয়ে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ) থেকে তাঁদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো অন্য দেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।
তদন্তের এই পর্যায়ে আমরা মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে নতুন যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছেরিফাত রহমান শামীম, ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনা
দলীয় ও অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে খুন হন জাহিদুল ইসলাম। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতি (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ঘটনার পর প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও জাহিদুল ইসলামকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল জব্দ করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছেন। ঘটনার পর ওই মোটরসাইকেলটি মোল্লা শামীম নামের এক ব্যক্তি সেখানে রেখে এসেছিলেন। কিন্তু মোল্লা শামীম গ্রেপ্তার না হওয়ায় জব্দ মোটরসাইকেলটি জাহিদুল হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, মোল্লা শামীম হলেন ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের বন্ধু।
মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করতে না পারা এবং মুসা ও মোল্লা শামীমকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় জাহিদুল হত্যার তদন্ত এগোচ্ছে না বলে ডিবি জানিয়েছে।
ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তের এই পর্যায়ে আমরা মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে নতুন যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
জাহিদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব মিলে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে গত ২ এপ্রিল ঢাকা থেকে খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ২৭ মার্চ বগুড়া থেকে ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ গ্রেপ্তার হন। পরে মাসুম জাহিদুলকে গুলি করে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর এলাকার রূপালী যুব উন্নয়ন সংস্থার (রূপালী ক্লাব নামে পরিচিত) কার্যালয় থেকে আরফান উল্লাহ ওরফে দামাল নামের ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাঁর কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, আরফান রূপালী ক্লাবে বসে জাহিদুল হত্যার পরিকল্পনার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আরফানের কাছ থেকে উদ্ধার অস্ত্রটি জাহিদুল খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত হতে ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।