জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তদন্তে ভিন্ন তথ্য

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বারৈচা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে তাবলিগ জামাতের সদস্যদের অবস্থান করতে না দেওয়া এবং পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দুই তদন্তে ঘটনা ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মোট ৪৮ জনের সাক্ষ্য নিয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার রাতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামানের কাছে ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আর প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও তাবলিগ জামাতের সদস্যসহ মোট ৫১ জনের সাক্ষ্য নিয়ে পুলিশের তদন্ত করা হয়েছে। ২৫ নভেম্বর এ তদন্ত কমিটির প্রধান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান এসপির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ নভেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা থেকে ঘটনাটি শুরু হলেও রাত ১১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসককে জানাননি এসপি। এটি পুলিশ প্রবিধানের ১৬ (খ)-এর লঙ্ঘন। পাশাপাশি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কোনো সতর্কতা না দিয়ে এবং নির্বাহী হাকিমের অনুমতি ছাড়াই গোয়েন্দা পুলিশ গুলি ছোড়ে, যা পুলিশ প্রবিধানের ১৫১, ১৫৪, ১৫৫-এর পরিপন্থী এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ১২৮ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমামের উসকানিমূলক বক্তব্যে এলাকাবাসী তাবলিগ সদস্যদের ওপর চড়াও হয় এবং তাঁদের মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইমামকে ধরে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় এলাকাবাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটাসহ কাঁদানে গ্যাসের তিনটি শেল ও শর্টগানের ৩৬টি গুলি ছোড়ে পুলিশ। তবে ইমামের বক্তব্যের কোনো সত্যতা পাননি তদন্ত কমিটির প্রধান মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তাবলিগের লোকজন ইমামের এমন বক্তব্যের কথা আমাদের জানিয়েছেন। তবে এলাকাবাসী ও ইমাম এ কথা অস্বীকার করেছেন।’
জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, ইমাম তাবলিগ সদস্যদের মসজিদে অবস্থান না করতে এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসপি দুই দফায় পুলিশ পাঠান। সংকট সমাধানে ব্যর্থ হয়ে পরে ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ পাঠানো হয়। সে সময় কোনো অভিযোগ ছাড়াই ইমামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে এসপির নির্দেশে ডিবি পুলিশ নিরস্ত্র এলাকাবাসীর ওপর শর্টগানের গুলি ছোড়ে।
পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত ইমামের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে ওই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। আজ (বুধবার) তদন্ত প্রতিবেদনের কপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’