ছয় বছর আগে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনা পুরো দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর জঙ্গি দমনে সারা দেশে একের পর এক অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দেশে ২ হাজার ৪১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে র্যাবের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৮ জন।
এদিকে জঙ্গি দমনের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের দুটি ইউনিট গ্রেপ্তার করেছে ৭৩২ জনকে। এর মধ্যে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ৫৫৯ এবং অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ) গ্রেপ্তার করেছে ১৭৩ জনকে।
সিটিটিসি ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের অভিযানে ছয় বছরে গ্রেপ্তার ৫৫৯ জনের মধ্যে নব্য জেএমবির সদস্যই ২০৪ জন। নব্য জেএমবির সদস্যরাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।
এ সময় জেএমবির ৯৯ জন, আনসার আল ইসলামের ১৩৬ এবং হরকাতুল জিহাদের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গি সংগঠনগুলোর অধিকাংশ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করার কারণে সংগঠনগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই বছরে দেশে কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। এর মানে হচ্ছে, হামলা করার সক্ষমতা তাদের নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তাদের সক্ষমতা অনেক কমে এসেছে। এ মুহূর্তে দেশে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। জঙ্গি দমনে এখন শুধু অভিযান নয়, কেউ যেন জঙ্গিবাদে না জড়ায় সে জন্য সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট
হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জঙ্গি দমনে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ) অনুমোদন পায়। তবে ২০১৯ সালে গেজেট হওয়ার পর সংস্থাটি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করে। এই তিন বছরে এটিইউ জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ১৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আনসার আল ইসলামের ৪৮ সদস্য রয়েছে।
এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ আসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এটিইউ জঙ্গি দমনে কাজ করছে। এরই মধ্যে জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনলাইন মাধ্যমেও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানেও নিয়মিত নজরদারি রাখা এবং জঙ্গিদের চিহ্নিত করে আইনের আনার প্রক্রিয়া চলমান।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দেড় সহস্রাধিক জঙ্গি
হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর এ পর্যন্ত জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ১ হাজার ৬৭৮ জনের জেএমবির সদস্য ৮৬৪। এ ছাড়া আল্লাহর দলের ২০১ জন, আনসার আল ইসলামের ৫৯২, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, এখন জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙে গেছে। তারা এখন অনলাইনে বেশি সক্রিয়। সাইবার মনিটরিং সেলের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পলাতক অনেক জঙ্গিকে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জঙ্গি দমনের বিষয়টি শুধু অভিযানে সীমাবদ্ধ নেই, উগ্রবাদ মুক্তকরণ প্রক্রিয়ায় অনেককেই জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ছয় বছরে র্যাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ৭৭৯টি অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ছিল ৫৪টি। বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি।