রাজনীতিসহ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন না করার পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর মতে, গণমাধ্যমকর্মীরা রাষ্ট্রদূতদের প্রশ্ন করেন বলেই তাঁরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন। আজ তাঁর দপ্তরে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আপনারাও ওনাকে দিয়ে জোর করে বলান। সে বেচারা (রাষ্ট্রদূত) বাধ্য হয় উত্তর দিতে। আপনারা বিদেশের কাছে ধরনা না দিলেই ভালো। আপনারা আমাদের কাছে আসুন। তাঁদের (বিদেশিদের) কাছে যান বলেই তাঁরা বক্তব্য দেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তির কারণে এখনো আমরা বিদেশি কিছু হলে পছন্দ করি । সে কারণে তাদের কাছে ধরনা দিই। এ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘গণতন্ত্র বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের হয়। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নেতা। ভারতবর্ষে আমরা ষষ্ঠ শতাব্দীতে গণতন্ত্র চালু করেছি। আমরা ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছি, ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়েছে। পৃথিবীর আর কোথাও দিয়েছে? আমরা এ দেশে সংগ্রাম করেছি, যখন মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। যখন মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন এ দেশে গণহত্যা হচ্ছিল, তখন তারা ধারেকাছেও আসেনি। মিয়ানমারে যখন গণহত্যা হচ্ছিল, তখন ওই লোকগুলোকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। কে এটা করেছে, এটা বাংলাদেশ করেছে। শেখ হাসিনা সীমান্ত খুলে দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ঘিরে দেশের একটি নাগরিকেরও মৃত্যুর পক্ষে নয়। আমরা চেষ্টা করছি, একটা লোকও যেন মারা না যায়।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সব দেশের গণতন্ত্রে ভালো-মন্দ আছে। এটা সব সময় যথার্থ নয়। এটা একটা প্রক্রিয়া। প্রচেষ্টার মাধ্যমে গণতন্ত্র পরিপক্ব হয়। আমাদেরও দুর্বলতা আছে। কীভাবে দুর্বলতা সমাধানে কাজ করা যায়, আমরা চেষ্টা করছি। এটার মানে এ নয় যে তাদেরটা সবচেয়ে ভালো। তাদেরও দুর্বলতা আছে, সমস্যা আছে।’
বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রাখতে সরকার বিবৃতি দেওয়া কিংবা প্রতিবাদ করতে পারে কি না, জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে যাঁরা কূটনৈতিক আছেন, তাঁরা পরিপক্ব। তাঁরা সম্মানিত লোক। তাঁরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’