দেশে ষাটোর্ধ্ব ৩৭% মানুষ টিকাই পাননি
ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাঁদের বিরাট অংশকে অরক্ষিত রেখে বুস্টার ডোজ দিয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না।
করোনায় মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৬০ বছর ও তার বেশি বয়সী মানুষের। দেশে এই বয়সীদের ৩৭ শতাংশ মানুষ এখনো করোনার টিকার প্রথম ডোজই পাননি। এরই মধ্যে সরকার পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পাওয়া এই বয়সীদের তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দিতে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুষ্টার ডোজের দরকার আছে, তবে বেশি দরকার ঝুঁকিতে থাকা বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা।
করোনার টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রথম সারির কর্মীদের পাশাপাশি ছিলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ। দেশে এই বয়সী মানুষ আছেন ১ কোটি ৩১ লাখ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৬ ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধনই করেননি। আর পূর্ণ দুই ডোজ টিকার বাইরে এই বয়সী মানুষ আছেন ৬০ শতাংশের বেশি।
এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেননি এমন মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাঁরা এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি কম, যাঁরা দুই ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের ঝুঁকি আরও কম। সুতরাং বেশি মানুষকে টিকার আওতায় এনে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, বুস্টার ডোজ দিয়ে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে নাবে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক
বেশি বয়স্ক মানুষ নানা ধরনের রোগে ভোগেন। করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে ২৮ হাজার ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও অস্ট্রেলিয়ায় দেখা গেছে পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে গবেষণা না হলেও অন্য দেশে দেখা গেছে, কারও কারও ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পরও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্থায়ী হচ্ছে না, সময় চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধীরে ধীরে কমছে। টিকার তৃতীয় ডোজ দিলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।
কিছু মানুষের টিকার প্রতি অনীহা আছে। তাই তাঁরা টিকার জন্য নিবন্ধনও করেন না, টিকা নিতেও আসেন না। তাঁদের আমরা বাদ দেব না। তাঁদের টিকার আওতায় আনার চেষ্টাও চলবে, পাশাপাশি বুস্টার ডোজও চলবেআহমেদুল কবীর , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক
এই পরিস্থিতিতে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হবে। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী মানুষ এবং সম্মুখসারির কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
ষাটোর্ধ্ব মানুষের বেশির ভাগ টিকার বাইরে থাকা এবং বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু মানুষের টিকার প্রতি অনীহা আছে। তাই তাঁরা টিকার জন্য নিবন্ধনও করেন না, টিকা নিতেও আসেন না। তাঁদের আমরা বাদ দেব না। তাঁদের টিকার আওতায় আনার চেষ্টাও চলবে, পাশাপাশি বুস্টার ডোজও চলবে।’
ফেব্রুয়ারিতে দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর দিকে স্বাস্থ্য বিভাগ ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী এবং সম্মুখসারির কর্মীদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখে। এরপর বয়সসীমা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয়। এখন ১৮ বছর বয়সী যে কেউ টিকার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন আছে এমন ১২ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীরাও টিকা নিতে পারছে। এতে নিবন্ধন করা ও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা নিবন্ধন ও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।
১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ার ৪৪টি দেশ-অঞ্চলে টিকাদানের হিসাব তুলে ধরে বলেছে, বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেননি এমন মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাঁরা এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি কম, যাঁরা দুই ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের ঝুঁকি আরও কম। সুতরাং বেশি মানুষকে টিকার আওতায় এনে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, বুস্টার ডোজ দিয়ে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না।’