এশিয়ার ৪৪ দেশের হিসাব
টিকাদানে ৩৫তম বাংলাদেশ
এডিবি বলছে, সবকিছু খুলে দেওয়ার যে প্রবণতা, তা টিকাদানে পিছিয়ে থাকা দেশে উল্টে যেতে পারে।
করোনার টিকাদানে এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এশিয়ার ৪৪টি দেশ/অঞ্চলের টিকাদানের হিসাব তুলে ধরে জানিয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম।
বাংলাদেশ টিকাদানে নিজের প্রতিবেশী, প্রতিযোগী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। এশিয়ার টিকাদানে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, পালাউ, দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া ও ব্রুনেই-দারুসসালাম। বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে মালয়েশিয়া, চীন, ভুটান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে মিয়ানমার, আফগানিস্তানসহ ৯টি দেশ।
এডিবি তাদের প্রতিবেদনে টিকাদানে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর বিষয়ে বলেছে, মহামারির নতুন ঢেউ এসব দেশে সবকিছু খুলে দেওয়ার যে প্রবণতা, তা উল্টে দিতে পারে। উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা দিলেই যে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে টিকা পেলে মানুষের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কমে।
‘এশীয় উন্নয়ন পূর্বাভাস’-এর সম্পূরক হিসাবে দেওয়া এই প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের প্রতিবেদনের চেয়ে কিছুটা কম। তবে ২০২২ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এডিবির প্রতিবেদনে জনসংখ্যার কত শতাংশ পূর্ণ দুই ডোজ ও এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, তা ধরে বিভিন্ন দেশ/অঞ্চলের অবস্থান তুলে ধরা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ায় ৩৫তম। প্রতিবেদনে তথ্য নেওয়া হয়েছে ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে। হিসাব ২ ডিসেম্বরের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৩ ডিসেম্বরের হিসাবে, বাংলাদেশে দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ৪ কোটি ৩৫ লাখের মতো মানুষ। এক ডোজ টিকা পেয়েছেন ৬ কোটি ৭১ লাখ জন। সরকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে চায়।
এডিবির প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়, পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ার কারণে এ দেশের রপ্তানি বাড়ার হার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। কারণ, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি এখন অনেকটাই চড়া। এর সঙ্গে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা করতে বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব ও মুদ্রানীতিগত প্রণোদনা দিয়েছে। এখন এসব প্রণোদনার ঘোষণা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এডিবির পূর্বাভাস হলো, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এই প্রণোদনা বাস্তবায়নের কারণে বাজারে বাড়তি অর্থ যাবে। তা মূল্যস্ফীতির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘পূর্ণ দুই ডোজ টিকার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। এতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো রোডম্যাপ না থাকায় এমন হয়েছে। শুরুতেই টিকা কেনার ক্ষেত্রে আমরা হোঁচট খেয়েছি। আগ্রহের সময় মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। টিকার জন্য ক্যাম্পেইন (প্রচারাভিযান) ঠিকমতো কখনোই হয়নি।’
অন্যান্য অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদনের মতো এডিবির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এখন অর্থনীতির প্রধান ঝুঁকি করোনা মহামারি। এত দিন বলা হয়েছে, টিকাদানে গতি এলে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ইউরোপ টিকাদানে অনেক এগিয়ে থাকলেও সেখানে আবারও করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক দেশেই আবার নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। করোনার অতি সংক্রামক ধরন অমিক্রনও দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
এ পর্যায়ে এসে এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকাদানের হার যেসব দেশে কম, সেখানে ‘রি-ওপেনিং’ বা অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সচল করার চেষ্টাটি বাধার মুখে পড়তে পারে।
টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ণ দুই ডোজ টিকার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। এতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আমাদের সামনে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো রোডম্যাপ (পথনকশা) না থাকায় এমন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুরুতেই টিকা কেনার ক্ষেত্রে আমরা হোঁচট খেয়েছি। আগ্রহের সময় মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। টিকার জন্য ক্যাম্পেইন (প্রচারাভিযান) ঠিকমতো কখনোই হয়নি। অগ্রাধিকার ঠিক করার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা দেখা গেছে। অল্প সময়ে খুব যে অগ্রগতি হবে, সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।’