অন্তঃসত্ত্বা টিকা নিলে অ্যান্টিবডি পায় শিশু
অন্তঃসত্ত্বা মা করোনার টিকা নিলে সুরক্ষা পেতে পারে জন্ম নেওয়া শিশু। টিকা নেওয়ার পর জন্ম নেওয়া শিশুদের শরীরে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের দুটি হাসপাতালে এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। গবেষণা ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (জেএএমএ) ৭ ফেব্রুয়ারি অনলাইন সংস্করণে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
গবেষকেরা করোনার টিকা নেওয়া (এমআরএনএ টিকা) ৭৭ জন অন্তঃসত্ত্বা এবং ১২ জন করোনায় আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাকে গবেষণার জন্য তালিকাভুক্ত করেন। করোনায় আক্রান্ত নারীরা ২০ থেকে ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
টিকা দেওয়া ও করোনার উপসর্গ থাকে—এই দুই ধরনের মায়েদের শিশুদের নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয় ২০২১ সালের ২১ জুলাই থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে। কোন দুটি হাসপাতালে এই গবেষণা হয়েছিল, তার উল্লেখ নেই গবেষণাপত্রে। তবে গবেষক দলের মুখপাত্র আদ্রিয়া জি এডলো বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক।
টিকা দেওয়া মায়েদের ৪৯টি শিশুর নমুনা নেওয়া হয়েছিল জন্মের দুই মাসের মাথায়। টিকা নেওয়া মায়েদের বাকি ২৮টি শিশুর নমুনা নেওয়া হয়েছিল জন্মের ১৭০ দিনের মাথায়। অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত মায়েদের ১২টি শিশুর নমুনা নেওয়া হয়েছিল জন্মের ২০৭ দিন পর। তবে মায়েদের নমুনা নেওয়া হয়েছিল সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই।
নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টিকা নেওয়া মায়েদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ করোনার উপসর্গ থাকা মায়েদের চেয়ে ভালো। অন্যদিকে দুই মাসের শিশুদের ৯৮ শতাংশের (৪৯ জনের মধ্যে ৪৮) শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে।
১৭০ দিনের মাথায় নমুনা নেওয়া শিশুদের ৫৭ শতাংশের (২৮ জনের মধ্যে ১৬ জন) অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এদের মায়েরা গর্ভাবস্থায় টিকা নিয়েছিলেন। অন্যদিকে ২০৭ দিনের মাথায় নমুনা নেওয়া শিশুদের ৮ শতাংশের (১২ জনে ১ জন) অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এদের মায়েদের গর্ভাবস্থায় করোনার উপসর্গ ছিল, তবে তাঁরা টিকা নেননি।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা নেওয়া মায়েদের সন্তানদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি করোনায় আক্রান্ত মায়ের সন্তানদের শরীরে থাকা অ্যান্টিবডির চেয়ে বেশি, অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত তা দেখা যাচ্ছে।
মায়ের অ্যান্টিবডি যে সন্তানের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে—এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বয়সী শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, অথচ এই বয়সী শিশুদের জন্য এখনো কোনো টিকার সুপারিশ করা হচ্ছে না। এই গবেষণার একটি প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, গবেষণাটি কমসংখ্যক গবেষক নিয়ে করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রওশন আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা টিকা নেওয়ার নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। আমরা সব সময় গর্ভবতী মায়েদের টিকা দেওয়ার সুপারিশ করে আসছি। এখন আরও জোর দিয়ে বলব।’