বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সাধারণ সভায় এই অভিমত প্রকাশ করা হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ কথা জানিয়েছে।
সভায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা এবং একে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসন পতনের পর থেকেই ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশকে নিয়ে নানান মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচার দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করে একধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি হিসেবে কাজ করছে। সভায় অভিযোগ করা হয়, ভারতের ভূমিকা প্রবল আধিপত্যবাদী। দুই দেশের ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সমস্যাকে সাম্প্রদায়িক ঘেরাটোপে আটকে রাখতে চায়। এতে দুই দেশেরই ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মধ্যে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ও ভয় তৈরি হয়। ভারতের রাজনৈতিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের অতি দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও সভায় মত প্রকাশ করা হয়।
সভা থেকে অতিসত্বর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে এবং এর আগে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব অসম চুক্তি হয়েছে, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, রামপালসহ জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
বিজেপির উসকানিতে পা না দেওয়ার জন্য দেশের জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সভায়। বলা হয়, দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের উদ্বেগ নিরসনের দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি বিভ্রান্তিকর মামলা থেকে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যদি কোনো জনবিরোধী অভিযোগ থাকে, তা প্রকাশ্যে উপস্থাপন করতে হবে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেসবের শক্তভাবে বিরোধিতা করার জন্য দুই দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক নাগরিক ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সভায়। এ ছাড়া সভায় দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের জন্য প্রতিশ্রুত বিনা মূল্যে চিকিৎসা দ্রুত নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সভায় ‘৭১ থেকে ২৪: বিজয়ের লড়াই’ শিরোনামে ডিসেম্বর মাসে একাধিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উদ্যাপন করা হবে। ২০ ডিসেম্বর শহীদ মিনার থেকে ‘৭১ থেকে ২৪: বিজয়ের লড়াই’ শিরোনামে একটি গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন হারুন-অর-রশিদ, আকরাম খান, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাকী বিল্লাহ, আফজাল হোসেন, রফিকুজ্জামান ফরিদ, দিলীপ রায় প্রমুখ।
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২২ আগস্ট গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সমাজের নানা পেশার শতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হয়।