‘এক্কানা খানার পানিও এহন বউত দামি’

প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন গ্রামবাসী। আজ বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১০ নম্বর সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডেপ্রথম আলো

‘এদ্দুর ভিতরে কেউ ত্রাণ দিবার লাই ন আইয়ে। তোঁয়ারা আইস্যু বউত খুশি হয়্যি। এক্কানা খানার পানিও এহন বউত দামি।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলা কথাগুলোর তরজমা করলে অর্থ দাঁড়ায়, ‘এত ভেতরে ত্রাণ দিতে কেউ আসেনি। আপনারা আসায় খুব খুশি হয়েছি। একটু খাওয়ার পানিও এখন অনেক দামি।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ হাতে পেয়ে এমনভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১০ নম্বর সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছেনুয়ারা বেগম। আজ শনিবার বিকেলে ষাটোর্ধ্ব এই নারীর হাতে ত্রাণ তুলে দেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা। প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা আজ ছেনুয়ারা বেগমের পরিবারের মতো হাসি ফুটিয়েছে ১৬৩টি পরিবারের মুখে।

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি ইব্রাহিম তানভীর বলেন, হালদার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে ফটিকছড়ির সুন্দরপুর ইউনিয়নের অনেক গ্রাম। গতকাল শুক্রবার থেকে এই ইউনিয়নে পানি নেমে গেলেও রাস্তা দুর্গম হওয়ায় ত্রাণ পাচ্ছিলেন না পাঁচ পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। ট্রাক থামার পরে আরও প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এই গ্রামে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।

ফটিকছড়ি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের সব কটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল বলে জানান বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান। তাঁর কথা, ‘অধিকাংশ ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি এখনো। বর্তমানে পানি কমে বেশির ভাগ সড়ক ভেসে উঠলেও এর দুই পাশের গ্রামগুলোতে এখনো নৌযান চলাচল করছে। গ্রামের অধিকাংশ কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। গ্রামের সবজিখেত, ফসলের জমি, মাছের ঘের ভেসে গেছে। এ অবস্থায় আমরা মানুষের মাঝে ভালোবাসার উপহার পৌঁছে দিতে এসেছি।’

পানি নেমে গেলেও গ্রামবাসীর কষ্টের শেষ নেই বলে জানালেন পাঁচ পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা এজাহার আলী। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সংকট বিশুদ্ধ পানির। ত্রাণসহায়তা পেয়ে তাই প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

ত্রাণ হাতে পেয়ে খুশি ছেনুয়ারা বেগম। আজ বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১০ নম্বর সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে
প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি শাওন রায় বলেন, ‘গতকাল আমরা ফেনীতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলাম। আর আজ এসেছি ফটিকছড়িতে। চট্টগ্রাম বন্ধুসভার প্রায় ৩০ জন সদস্য এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। আমরা আজ বন্যাদুর্গত ১৬৩ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা তাঁদের মুড়ি, গুড়, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, বিস্কুট, খাওয়ার স্যালাইন, কেক, নুডলস, দিয়াশলাই, জুসসহ বিভিন্ন শুকনা খাবার সরবরাহ করেছি।’