রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আজ সোমবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন একদল লোক। একই দিন রাজশাহীতে প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা করে সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাতে বগুড়া কার্যালয়েও হামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ এবং প্রথম আলোর কর্মীদের হুমকি ও বিষোদ্গার করা হয়।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছিল। তাঁদের ছাড়িয়ে আনতে আজ বিকেলের দিকে তেজগাঁও থানার বাইরে জড়ো হয়েছিলেন কিছু লোক। এরপর মুচলেকা নিয়ে ওই ব্যক্তিদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে থানার সামনে থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে এসে রাস্তা বন্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন।
রাজধানীর বৃহত্তম কাঁচাবাজারের আড়ত কারওয়ান বাজারে তাঁরা অবস্থান নেওয়ায় ব্যবসায়ী–ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দেন। ক্রেতারাও চলে যেতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনী–পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিল। এ অবস্থায় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তাঁরা চলে যান।
রোববার রাতে ফেসবুকে ঘোষণা দেওয়া হয়, শাহবাগে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে সোমবার বিকেলে তাঁরা প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আসবেন। তবে আজ বিকেলে শাহবাগে কাউকে জড়ো হতে দেখা যায়নি। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন ধরে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছিল একটি চক্র। গত ২৫ অক্টোবর এদের একটি অংশ প্রথম আলোসহ আরও কয়েকটি গণমাধ্যমের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয়। তবে ব্যাপক সমালোচনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে সেদিন তাঁরা জড়ো হননি। গত বৃহস্পতিবার এবং পরে শনিবার ও রোববার তাঁরা প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে রাস্তা বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন। রোববার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
রাজশাহীতে ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগ
প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী একদল ব্যক্তি। ‘আলেম ওলামা ও তাওহীদি জনতা, রাজশাহী’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে এসে আজ দুপুরে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে হামলা করা হয়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কপিতেও আগুন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইনবোর্ড ভেঙে অগ্নিসংযোগ করার কথা তো কেউ বলছে না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ তো বলল না।’ পরে ওসির মুঠোফোনে এ ঘটনার ভিডিও চিত্র পাঠানো হয়। এরপর ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বগুড়া কার্যালয়ে হামলা
রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কার্যালয়ে কেউ ছিলেন না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচ-ছয়টি মোটরসাইকেলে করে ১৫-১৬ জন মুখোশ ও হেলমেট পরে এসে হামলা চালায়। তারা ব্যাগে করে আনা ইট-পাথর কার্যালয় লক্ষ করে ছুড়ে। এতে দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কার্যালয়ের সামনের দিকের কাঁচ ভেঙে যায়। প্রথম আলোর ডিজিটাল সাইনবোর্ডও ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।
ঘটনার পর প্রথম আলো কার্যালয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে।
সাংবাদিকদের হুমকি
আজ চাঁদপুরেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন একদল লোক। দুপুরের পর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হওয়া ওই ব্যক্তিরা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। চাঁদপুর প্রতিনিধিকে একাধিক ফেসবুক আইডি থেকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। তিনি চাঁদপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
অন্যান্য স্থানেও ভীতি
বরিশালের বিএম কলেজে রোববার রাতে কিছু ব্যক্তি জড়ো হয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। আজ বেলা ১১টায় নগরের বাংলাবাজার মোড়ে প্রথম আলোর বরিশাল কার্যালয়ের সামনে অপর একদল ব্যক্তিকে জড়ো হতে দেখা যায়। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তখন জড়ো হওয়া কয়েকজন হ্যান্ডমাইকে কথা বললেও পরিচয় প্রকাশ করেননি।
চট্টগ্রামেও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ বেলা তিনটার দিকে নগরের ২ নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে জড়ো হয়ে কিছু ব্যক্তি স্লোগান দেন। আগের দিন রোববার রাত ৯টার দিকে নগরের মিমি সুপার মার্কেট–সংলগ্ন প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দেন কয়েকজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও স্লোগান দিয়েছেন একদল ব্যক্তি। সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার–সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নেন তাঁরা।
এ ছাড়া সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয়ে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে সোমবার প্রথম আলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দেওয়া হয়।