সত্যায়ন জটিলতায় সৌদিতে কর্মী পাঠানো কমছে

মূলত সৌদি আরবের শ্রমবাজার ঘিরেই চলছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক ঘোষণার পর দেশটিতে কর্মীর চাহিদা বেড়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন দেশটিতে। ফেব্রুয়ারিতে এটি অর্ধেকে নেমে এসেছে। রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্যরা বলছেন, কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন জটিলতায় সৌদিতে কর্মী পাঠানো কমছে।

সৌদি শ্রমবাজার নিয়ে তৈরি জটিলতা দূর করতে আজ মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন বায়রার সদস্যরা। বৈঠক শেষে তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বসে উপদেষ্টা করণীয় ঠিক করবেন। তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

সৌদি আরব থেকে আসা কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র যাচাই–বাছাই করে তা সত্যায়ন করে পাঠায় দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। একজন কর্মীর চাহিদাপত্র এলে দূতাবাসের সত্যায়ন প্রয়োজন হয় না, একের অধিক হলেই তা সত্যায়ন করাতে হয়। এতে দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে। সময়মতো কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। আগে ২৪টি পর্যন্ত নিয়োগপত্রের সত্যায়ন প্রয়োজন ছিল না। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে নতুন নিয়ম চালু করে সরকার। আগের নিয়মে সত্যায়ন চালু করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বায়রার নেতা খন্দকার আবু আশফাক বলেন, একটা একটা করে সব নিয়োগপত্র সত্যায়ন করতে গেলে অনেক সময় লেগে যায়। সত্যায়নের প্রক্রিয়া আগের নিয়মে ফেরালে কর্মী পাঠানো সহজ হবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবার যেন চক্র তৈরি না হয়, সেই অনুরোধ করা হয়েছে।

বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ২৪টি পর্যন্ত নিয়োগপত্রের জন্য দূতাবাসের সত্যায়ন প্রয়োজন ছিল না, শুধু বিএমইটির সত্যায়ন নেওয়া হতো। সব কর্মীর সত্যায়ন করার মতো সক্ষমতা দূতাবাসের নেই। তাই হঠাৎ করে নিয়ম পরিবর্তন করায় কর্মী পাঠানো কমে গেছে। এ নিয়ম অব্যাহত থাকলে কর্মী পাঠানো আরও কমে যাবে।

বায়রা সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ কর্মী যান ছোট ছোট চাহিদাপত্রের মাধ্যমে। মানে ১ থেকে ২৪টি পর্যন্ত চাহিদার মাধ্যমে। তাই দূতাবাসের সত্যায়ন জটিলতায় এখন ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় গত সরকারের মেয়াদে এমপি-মন্ত্রীরা মিলে চক্র করে লুটতরাজ করেছেন। এবার যেন সেটি না হয়, সেই অনুরোধ করা হয়েছে। এবারের সরকার কোনোভাবেই চক্র তৈরিতে সহায়তা করবে না বলেই বিশ্বাস করেন বায়রার সদস্যরা।

এর আগে একই দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন বায়রার সদস্যরা। এরপর তাঁদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন মন্ত্রণালয়ে। এতে তাঁরা বলেন, মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিন নূর ও তাঁর বাংলাদেশি অংশীদার রুহুল আমিন ওরফে স্বপনের সিন্ডিকেট প্রত্যেক কর্মী থেকে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা করে অবৈধ চাঁদাবাজি করেছে। আবার যাতে কোনোভাবে সিন্ডিকেট তৈরি না হয়, সে জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সিন্ডিকেটের মূল হোতা আমিন ও স্বপনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।

বিএমইটি সূত্র বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবে কর্মী যান ৪৪ হাজার ২২৯ জন। পরের মাসে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ হাজার ৫৮২ জনে। টানা তিন মাস এটি একই ধারায় ছিল। এরপর গত জানুয়ারিতে এটি কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৬১৮ জনে। আর ফেব্রুয়ারিতে সৌদি গেছেন ৪৪ হাজার ২৫৮ জন।