সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ও শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (বাঁয়ে) ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের এবং একই মামলায় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। অবিলম্বে শামসুজ্জামানের মুক্তি দাবি করেছে তারা।

প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, সংবাদমাধ্যমে সরকারের সমালোচনার জন্য বাংলাদেশে ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী প্রতিক্রিয়া দেখানোর ঘটনা বাড়ছে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে বন্ধ করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার আরএসএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে ২৯ মার্চ ভোররাত ৪টায় রাজধানীর ঢাকার উপকণ্ঠের বাসা থেকে তুলে আনা হয়। শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের জন্য পাঠানো আটজন পুলিশ সদস্য তাঁকে ধরে আনে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত শামসুজ্জামানের একজন স্বজন জানিয়েছেন, পুলিশ সদস্যরা শামসুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর ল্যাপটপ, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও দুটি ফোন নিয়ে যান।

আরও পড়ুন

আটকের সময় পুলিশ সদস্যরা কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাননি। তবে কয়েক ঘণ্টা পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হওয়ার কথা জানান। আজ তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যরাতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে আজ আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয়
ছবি: সাজিদ হোসেন

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক ডেস্কের প্রধান ড্যানিয়েল ব্যাস্টার্ড বলেছেন, ‘শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার এবং মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এটা স্পষ্টত সম্পূর্ণরূপে সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে সরকারের একটি পদক্ষেপ। আমরা এই মুহূর্তে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের কম সময় সামনে রেখে আমরা সরকারের প্রতি বহুমাত্রিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এই নির্বাচনের গণতান্ত্রিক গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি দেখা দেবে।’

আরও পড়ুন

অপপ্রচার

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বক্তব্য উঠে আসে। সেটা প্রথম আলোর ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়। তবে সেখানে এক ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরা হলেও আরেকজনের ছবি দেওয়া হয়, যার কথাও ওই প্রতিবেদনে রয়েছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের লোগো
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন

ফেসবুক পোস্টে একজনের বক্তব্য এবং আরেকজনের ছবি ব্যবহারের বিষয়টিকে লুফে নেন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক একজন ব্লগার এবং তিনি এক ফেসবুক পোস্টে প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ‘সরকারকে বেকায়দায়’ ফেলতে সাজানো প্রতিবেদন করার অভিযোগ তোলেন। যদিও প্রথম আলো দ্রুত সংশোধনী ও ছবির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়, তারপরেও একাত্তর টিভি (ধারাবাহিকভাবে সরকারপন্থী প্রচারের উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখে) দ্রুত এ বিষয়ে সোচ্চার হয় এবং তারা শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অপপ্রচার শুরু করে।

আরও পড়ুন

কোন তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা জানতে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়াকে গতকাল ই–মেইল পাঠিয়েছিল রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। তবে তিনি ওই মেইলের কোনো জবাব দেননি।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বলছে, বাংলাদেশে সরাসরি সরকারের সমালোচনা করা যেকোনো সংবাদমাধ্যমের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে। এমন সময়ে সেখানে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা উদ্বেগজনকভাবে কমছে।