৭ টাকায় পূজার পোশাক
দোকানের নাম ‘৭ টাকায় পুজোর বাজার’। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে নতুন জামা, ফতুয়া, টি–শার্ট, ফ্রক, শাড়িসহ আরও অনেক পোশাক। বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করে রমনা কালীমন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলেই এই দোকান।
গতকাল দেখা গেল, মণ্ডপের সামনেই পূজা উপলক্ষে বসানো হয়েছে খাবার ও রকমারি সামগ্রীর স্টল। সেখানেই এই পোশাকের দোকান। সাজানো হয়েছে শিশু ও নারীদের হরেক রকমের পোশাকে। পূজায় সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের বয়োবৃদ্ধ ও নারীদের জন্য নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করতেই নামমাত্র মূল্যের এই দোকান।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর আয়োজন করেছে। দোকানে শিশুদের পোশাক দেখানো এবং বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী সুলতানা জান্নাত। তিনি বলেন, যাদের বাজার থেকে বেশি দামে পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই, তারা শুভেচ্ছামূল্য হিসেবে সাত টাকা দিয়ে পছন্দমতো একটি পোশাক কিনতে পারছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মনে যাতে কোনো হীনম্মন্যতা বোধ না হয়, সে জন্য তাদের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়া হয়। টাকা দিয়ে কেনাকাটার মধ্য দিয়ে তারাও এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।
আয়োজকেরা জানালেন, মূলত শিশুদের জন্য এই আয়োজন। তবে বৃদ্ধ ও নারীদের জন্যও কিছু পোশাক রাখা হয়েছে। এক বছরের কম বয়সী থেকে শুরু করে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুরা এই স্টল থেকে পোশাক কিনতে পারবে। এখানে আছে শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি–শার্ট ও মেয়েদের ফ্রক, জামা—এসব। তবে একজন কেবল একটি পোশাক কিনতে পারবে। এ ছাড়া বৃদ্ধ নারীরাও এই সুবিধা পাবেন। সাত টাকায় তাঁরা একটি শাড়ি বা পাঞ্জাবি কিনতে পারছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ‘৭ টাকায় পুজোর বাজার’ নামের এই দোকান চালু করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। আগামী মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত প্রতিদিনই কালীমন্দিরের সামনে এই স্টল থাকবে। পূজার জন্য এই নতুন পোশাকের আয়োজন করা হলেও সব ধর্মের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই এখান থেকে পোশাক কিনতে পারবে বলে আয়োজকেরা জানান।
গতকাল দুপুরে এখানে শার্ট কিনতে এসেছিল গুলিস্তান–সদরঘাট রুটের ঘোড়ার গাড়ির চালকের সহকারী ৯ বছরের শুভ। দোকানে সাজিয়ে রাখা পোশাকগুলোর মধ্যে একটি টি-শার্ট বাছাই করে সেটি গায়ে দিয়ে মাপে ঠিক হওয়ার কিনে নেয়। এই টি–শার্ট অন্য কোথাও কিনতে গেলে অনন্ত ৩০০ টাকা পড়ত। তাই সাত টাকায় নতুন টি–শার্ট কিনতে পেরে সে আনন্দে আটখানা।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কার্যালয় মিরপুরে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করতে ‘এক টাকায় আহার’ নামের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালে এর কার্যক্রম শুরু। মূল উদ্যোক্তা কিশোর কুমার। তিনি এখন প্রবাসী। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের দান করা অর্থেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কর্মীরা সবাই স্বেচ্ছাসেবী। তাঁরা জানালেন, গ্রহীতাদের ভেতর ‘ভিক্ষা’ ও বণ্টনকারীদের মধ্যে ‘দান’ শব্দটি মুছে ফেলতে চান তাঁরা। গ্রহীতারা যেন ভাবতে পারেন, কিছু দাম দিয়েই খাবার বা পোশাকটি তাঁরা কিনেছেন। সংগঠনের ‘এক টাকায় আহার’ কার্যক্রম বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সংগঠনটি ‘এক টাকার চিকিৎসা’ ও ‘পাঁচ টাকায় স্যানিটারি প্যাড’ বিতরণের কার্যক্রমও শুরু করেছে।
গতকাল দেখা যায়, রমনা কালীমন্দিরে পূজা দেখতে আসা অনেকেই কৌতূহলী হয়ে এই দোকানে আসছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কেউ কেউ উপস্থিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাত টাকায় পোশাক কিনে দিচ্ছিলেন। আবার অনেকে একটি করে পোশাকের আর্থিক মূল্য দিয়ে অংশগ্রহণ করেন। তেমনি একজন চাকরিজীবী অনুপ কুমার ঘোষ। তিনি একটি পোশাকের সমমূল্যের টাকা দিয়ে এই কার্যক্রমে অংশ নেন। অনুপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের বিষয়ে শুনেছি। তাদের কাজ ভালো লাগে। সাত টাকায় পোশাক দেওয়ার এই কার্যক্রমও ভালো লেগেছে। টাকা দিয়ে তাদের এ কাজে অংশ নিয়েছি।’