মুক্ত ফুটপাতে স্বস্তির পথচলা
ফুটপাতে পণ্য সাজিয়ে বসেন হকাররা। ক্রেতা আকর্ষণে চলে তাঁদের হাঁকডাক। চলে জমজমাট বেচাকেনা। অবৈধ দখলদারদের এমন দৌরাত্মে পথচারীরাই ফুটপাতছাড়া। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও মতিঝিল এলাকার ফুটপাতের ‘চেনা’ চিত্র এটি। তবে ‘চেনা’ এই চিত্র বদলে গেছে। হকারদের উচ্ছেদ করায় ফুটপাত ফিরে পেয়েছে পথচারীরা।
ফুটপাতের কাঙ্ক্ষিত এই পরিবর্তন এসেছে মাসখানেক আগে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, এই পরিবর্তনকে স্থায়ী রূপ দিয়ে তারা সক্রিয়। তবে আবার ফুটপাতে হকার বসানোর চেষ্টা চলছে। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ১৮ এপ্রিল নগর ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে হকার্স ইউনিয়ন নামের একটি সংগঠন।
এর আগেও একবার এসব এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সে পরিবর্তন টেকেনি বেশি দিন। তাই এবারের পরিবর্তন কত দিন টেকে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পথচারীদের সঙ্গে হকারদের সামাজিক ও আর্থিক সম্পর্ক আছে। হকাররা নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পণ্যের জোগান দেন। হকারদের পরিবারও এর আয় থেকে চলে। এ কারণে হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। অন্যথায় হকাররা আবার ফুটপাতে বসে পড়বেন।
২০ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও মতিঝিল এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি ও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
জানতে চাইলে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাত পথচারীবান্ধব করতেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফুটপাতে কোনোভাবেই আর হকার বসতে দেওয়া হবে না, নীতিগতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি।
গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় দেখা যায়, গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর ও দক্ষিণ, সুন্দরবন মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকার ফুটপাত ফাঁকা। প্রশস্ত ফুটপাতে স্বচ্ছন্দে চলাচল করছে পথচারীরা। সড়কেও তেমন যানজট নেই। পুরানা পল্টন মোড়, জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা, দৈনিক বাংলা ও মতিঝিল এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আজহার আলী প্রতিদিন নবাবপুরের বাসা থেকে হেঁটে নয়াপল্টনের অফিসে যান। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর সঙ্গে কথা হয় গুলিস্তানে। আজহার বলেন, আগে গুলিস্তানের ফুটপাতে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হকারদের দখলে থাকত। ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হাঁটার কোনো জায়গা ছিল না। নবাবপুর থেকে হেঁটে অফিসে যেতে সময় লাগত প্রায় ৪০ মিনিট। এখন লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তরের ব্যবসায়ী আহমেদ হোসেন বলেন, তাঁদের মার্কেটের চারপাশে ১ হাজারের বেশি হকার ছিলেন। তাঁরা শামিয়ানা টানিয়ে ফুটপাতে বসতেন। এতে মার্কেটের মূল দোকান আড়ালে চলে যেত। এখন হকারদের উচ্ছেদ করায় গুলিস্তানের মার্কেটগুলোর পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়েছে।
১৩ মার্চ পল্টনে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে নগর ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয় হকার্স ইউনিয়ন। সংগঠনটির সভাপতি আবদুল হাশেমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, হকার্স ইউনিয়ন হকারদের সংগঠন নয়। তবে তাঁদের দাবি যৌক্তিক। অবিলম্বে সিটি করপোরেশন হকারদের পুনর্বাসন না করলে তাঁরাও কর্মসূচি দেবেন।
জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য হকারমুক্ত ফুটপাত দরকার। আবার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও হকারদের দরকার। তারা অল্প দামে কেনাকাটা করতে পারে। তিনি বলেন, হকারদের পুনর্বাসন করা অনেক কঠিন কাজ। এই কাজটা সহজভাবে করতে ডিএসসিসি মেয়রকে একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাত পথচারীবান্ধব করতে উচ্চ আদালতের পৃথক নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী ফুটপাত পথচারীবান্ধব করা হয়েছে। এখন গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত প্রায় শতভাগ হকারমুক্ত। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করছে পথচারীরা। তিনি বলেন, হকারদের পুনর্বাসনে কাজ চলবে।