বিজিএমইএ ভবন ভাঙায় অগ্রগতি নেই
হাতিরঝিলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইয়ের বহুতল ভবন ভাঙার উদ্দেশ্যে দুই মাস আগে তালা ঝুলিয়েছিল রাজউক। এরপর ভবনটি ভাঙার জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দরপত্র চূড়ান্ত করেনি সংস্থাটি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তথ্য অনুযায়ী, দরপত্রে অংশ নেওয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠান ভবনটি ভাঙার কাজ পেলে সনাতন পদ্ধতিতেই (হাতুড়ি পিটিয়ে) ভবনটি ভাঙা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দরপত্র চূড়ান্ত না হওয়ায় কোন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। তবে এখন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাঙায় আগ্রহ কর্তৃপক্ষের।
গতকাল বুধবার রাজউকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেও ভবনটি ভাঙার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভবনটি অবশ্যই ভাঙা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ। আর সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেছেন, বিষয়টি (ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া) এখনো ‘সেটেল’ হয়নি। দরপত্রও চূড়ান্ত করা হয়নি।
হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় গত শতকের ৯০–এর দশকে। ২০০৬ সালের দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না। মুচলেকা দিয়ে পাওয়া সময়ও গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।
তালা ঝোলানোর সময় রাজউকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভবনটি ভাঙলে হতাহতের ঝুঁকি থাকে। তাই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙা হবে। এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু এর পরদিন রাজউক তার অবস্থান থেকে সরে আসে। নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের বদলে সনাতন পদ্ধতিতেই ভবনটি ভাঙার পক্ষে কথা বলেন সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা। এর মধ্যেই গত ১৭ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দরপত্র আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজউক। ২৫ এপ্রিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল। এই সময়ে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। দরপত্র জমা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পি অ্যান্ড এস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ, সামিয়া এন্টারপ্রাইজ, সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স ও ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ। দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌসকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। কমিটির তথ্য অনুযায়ী, দরপত্রে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়। ভবনটি ভাঙতে এই প্রতিষ্ঠান রাজউককে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে।
নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ না সনাতন—কোন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে, জানতে চাইলে রাজউকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এখন পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার পক্ষেই রাজউক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙার সক্ষমতা রাজউকের নেই। এটি করতে হলে বিদেশি সাহায্যে করতে হবে। এতে যে বিপুল পরিমাণ টাকা (সম্ভব্য হিসাবে ১২-১৩ কোটি টাকা) লাগবে, তা বিদেশে চলে যাবে। আর সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙলে রাজউকের কিছু আয় হবে। পাশাপাশি যাঁরা ভবনটি ভাঙার কাজ পাবেন, তাঁরাও লাভবান হবেন।
এর আগে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙা হয়েছিল বিজয় সরণির র্যাংগ্স ভবন। ভবনটি ভাঙতে গিয়ে বেশ কয়েকজন মারা যান। গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে সনাতন পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবন ভাঙলে হতাহতের শঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সে সময় মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার আগে একটি চুক্তি করা হবে। চুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। চলতি সপ্তাহে চুক্তিটি হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।