ফুটপাতে ডিএসসিসির প্রস্রাবখানা
ঢাকার বেশির ভাগ ফুটপাত হকারদের দখলে। এতে পথচারীদের স্বস্তিতে হাঁটার উপায় নেই। এর মধ্যে ফুটপাতে প্রস্রাবখানা বসানোর পরিকল্পনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি প্রস্রাবখানা চালুও করা হয়েছে। নগরবিদ ও পথচারীরা বলছেন, নগরের ফুটপাতগুলো এমনিতেই পথচারীবান্ধব নয়। এর মধ্যে ফুটপাতে প্রস্রাবখানা বসালে তা নাগরিকদের ভোগান্তি আরও বাড়াবে, পরিবেশ এবং দৃষ্টিদূষণ ঘটাবে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, এফিশিয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্রস্রাবখানা তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি ফুটপাতে বসিয়েছে। নির্মাতারা জানায়, প্রতিটি নির্মাণে প্রায় ৮ লাখ টাকা করে ব্যয় হয়েছে। এগুলো প্রস্থে আড়াই ফুট, দৈর্ঘ্যে সাড়ে সাত ফুট। একটি প্রস্রাবখানা একসঙ্গে দুজন ব্যবহার করতে পারে। এগুলো স্থানান্তর উপযোগী। প্রতিটির ছাদে ৩৫০ লিটার করে পানি রাখার ব্যবস্থা আছে। কেউ প্রস্রাবখানা ব্যবহারের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্ল্যাশ হবে, যা চলে যাবে পাশের পয়োনালায়। রাতে জ্বলবে সৌরবাতি।
গত আগস্টে একটি প্রস্রাবখানা স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের ফুটপাতে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক রিকশাচালক সেটি ব্যবহার করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পূর্ব পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাত ও রমনা এলাকায় আরও দুটি প্রস্রাবখানা স্থাপন করা হয়েছে।
রিকশা থামিয়ে জগন্নাথ হলসংলগ্ন প্রস্রাবখানাটি ব্যবহার করতে দেখা যায় রিকশাচালক সাজিদ হোসেনকে। তিনি বলেন, আগে এই ফুটপাতে অনেকেই প্রস্রাব করত। এটি স্থাপনের পর এখন আর কেউ ফুটপাতে প্রস্রাব করে না।
তবে ভিন্ন বক্তব্য জগন্নাথ হলের কর্মচারী উত্তম কুমার রায়ের। তিনি বলেন, মানুষের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এই ধরনের প্রস্রাবখানা স্থাপন করা অনুচিত। এটা দৃষ্টিকটু আর এতে পরিবেশও দূষিত হবে। এ ধরনের প্রস্রাবখানা ফুটপাতে না বসিয়ে পথের পাশের কোনো খালি জায়গায় বসানো উচিত।
নগরের আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ফুটপাতে প্রস্রাবখানা স্থাপনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেন, ফুটপাতের পরিবেশ নষ্ট করা ছাড়াও পথচারীদের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করবে প্রস্রাবখানাগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পূর্ব পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে কথা হয় আরমান আলী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রস্রাবখানায় সার্বক্ষণিক লোক না থাকলে নোংরা হয়ে যাবে। প্রস্রাব ও নোংরা পানি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়বে। এ ছাড়া প্রস্রাবখানায় ব্যবহৃত সরঞ্জামও চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রায় একই কথা বলেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অনীক সাহা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাতে প্রস্রাবখানা নির্মাণ দৃষ্টিদূষণ ঘটাবে। তবে ফুটপাতের পাশে যদি পরিত্যক্ত জায়গা থাকে, সেখানে তা করা যেতে পারে। তবে এটি অবশ্যই রুচিসম্মত হতে হবে। যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, নগরে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার নেই। নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। এতে অনেকেই বাধ্য হয়ে যত্রতত্র প্রস্রাব করছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশস্ত ফুটপাত ও ফাঁকা জায়গায় অত্যাধুনিক প্রস্রাবখানা নির্মাণের কথা ভাবছেন তাঁরা। তার অংশ হিসেবে পৃথক তিনটি ফুটপাতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রস্রাবখানা স্থাপন করা হয়েছে। বিনা খরচায় তা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে নাগরিকেরা।
জানতে চাইলে এফিশিয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রশিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে আটটি প্রস্রাবখানা বসানোর অনুমতি দিয়েছে ডিএসসিসি।