প্রতিকার নেই, তাই অভিযোগও নেই
কিছুক্ষণ পরপর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে যাত্রীবাহী বাস। বাস থেকে নামা যাত্রীদের কাছে গিয়ে গন্তব্য জানতে চাইছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। ভাড়া নিয়ে দর–কষাকষি শেষে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে অটোরিকশা। আধা ঘণ্টায় সেখান থেকে একটি অটোরিকশাকেও মিটারে যেতে দেখা যায়নি।
সম্প্রতি গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরাই চালকের কাছে ভাড়া জানতে চাইছেন। তাঁদেরই একজন কবির হোসেন। তিনি বলেন, গত দুই বছরে তিনি একবারও মিটারে যেতে পারেননি। মিটারে যাওয়া নিয়ে চালকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা করতে হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে এখন আর চালককে মিটারের কথা বলেন না। নিজেই ভাড়া জানতে চান।
কেবল গাবতলী নয়, সম্প্রতি কল্যাণপুর, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ফার্মগেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একজন চালককেও মিটারে চলতে দেখা যায়নি। যাত্রীরা বলছেন, ঢাকা শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে প্রায় ১৫ বছর ধরে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও এটিকে যাত্রীবান্ধব করা যায়নি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তাঁরা নৈরাজ্যের বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে অভিযোগ করলেও প্রতিকার মেলে না। তাই তাঁরা এখন আর অভিযোগও করেন না।
গাবতলীতে সুহান মিয়া নামের এক যাত্রীকে পাওয়া গেল, যিনি মিটারে যেতে চান। তবে তিনজন চালকের সঙ্গে কথা বললেও কেউ মিটারে যেতে রাজি হননি। ওই তিনজন চালকের একজন মিলন মিয়া। তিনি বলেন, মিটারে পোষায় না। অটোরিকশার জমা, দৈনন্দিন খরচ ও গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে মিটারে চলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া অ্যাপভিত্তিক পরিবহনের কারণে অটোরিকশার যাত্রীর সংখ্যাও আগের চেয়ে কমে গেছে। তাই তিনি মিটারে চলেন না।
২০০২ সালের শেষ দিক থেকে রাজধানীতে অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর এই খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে একটি নীতিমালা করা হয়। নীতিমালাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। তাই অটোরিকশায় চলাচল করতে গিয়ে কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করা যায় সংস্থাটিতে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, অভিযোগ পেলে তাঁরা যথাযথ ব্যবস্থাও নেন।
>অটোরিকশায় ভাড়ানৈরাজ্য
পাঁচ মাসে বিআরটিএতে অভিযোগ মাত্র ২২ টি
সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে অভিযোগ নেই
জানা গেছে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মে, জুন ও জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিআরটিএতে মাত্র ২২টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই বাসভাড়া নিয়ে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে কোনো অভিযোগই নেই।
অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মানুষ অভিযোগ করলে প্রতিকার পায় না। এ জন্য তাঁদের বিআরটিএর প্রতি আস্থা নেই। আর আস্থা না থাকার কারণেই যাত্রীরা অভিযোগ করেন না। তাঁর মতে, একটি অটোরিকশাও যে মিটারে চলছে না, তা প্রকাশ্য। এর জন্য যাত্রীর অভিযোগের প্রয়োজন নেই। ভাড়ানৈরাজ্য দূর করতে বিআরটিএর সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, অটোরিকশা যাতে মিটারে চলে, সে জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আর অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
তবে এভাবে অটোরিকশা খাত শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে না বলে মনে করেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, যাত্রীবেশে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অটোরিকশায় চলতে হবে। কেউ মিটারে যেতে রাজি না হলে প্রয়োজনে অটোরিকশা ক্রোক করে দরপত্রের মাধ্যমে মালিকানা অন্যজনকে হস্তান্তর করতে হবে। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে অটোরিকশার মালিকেরা ভয় পাবেন। আর খাতটিও শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে।