‘পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম কবে সরবে?’

নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ। সেদিন যাঁরা প্রিয় মানুষগুলোকে হারিয়েছেন, সেই স্বজনেরা আজ নিমতলী ছাতা মসজিদের সামনে মানববন্ধন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ সংগঠনের সদস্যরা
ছবি: প্রথম আলো

পুরান ঢাকায় একের পর এক ঘটে ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। দগ্ধ হয় মানুষ, বাড়ে হতাহতের সংখ্যা। আগুনের কোনো ঘটনা ঘটলেই কিছুদিন চলে প্রশাসনের তোড়জোড়। কিন্তু বদলায় না পরিস্থিতি।

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। আজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনার ১১ বছর পূর্ণ হলো। সেদিন যাঁরা প্রিয় মানুষগুলোকে হারিয়েছেন, সেই স্বজনেরা আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে নিমতলী ছাতা মসজিদের সামনে মানববন্ধন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ সংগঠনের সদস্যরা। আগুন লাগা ওই ভবনের সামনের স্মৃতিস্তম্ভে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম সরিয়ে নেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা।

নিমতলীর সেদিনের আগুনে ছোট ভাইকে হারান শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত বড় আগুনে এতগুলো মানুষ মারা গেল। অথচ কারও বিচার হলো না। আমরা এখনো ওই ঘটনার বিচার চাই।’

নিমতলীর বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ওই ঘটনার পর কোনো ধরনের শিক্ষা নেননি। সরকার রাসায়নিক গুদাম সরানোর বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রক্ষা করেনি। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে আমরা মুক্তি চাই। পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরবে কবে?’

নিমতলীর আগুন লাগা ওই ভবনের পাশেই নবাব কাটারা সমাজকল্যাণ সংগঠন ও পঞ্চায়েত কার্যালয়। এই পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, নিমতলীর আগুনের ঘটনার পর রাসায়নিক গুদাম সরানোর কথা। ১১ বছরেও তা সম্ভব হয়নি। অথচ পুরান ঢাকাতে প্রায়ই ছোট-বড় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। চোখের অগোচরেই এসব রাসায়নিকের ব্যবসা চলছে। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার যেসব বাড়িতে গুদাম আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে বাড়ির সামনে লাল চিহ্ন দিয়ে দেওয়া হোক। এসব বাড়ি আবাসিক হিসেবে ভাড়া দেওয়াও বন্ধ করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ সচেতন হবে।

নিমতলীর ৪৩ নবাব কাটারার একটি পাঁচতলা ভবনের পাশেই নিমতলীর ঘটনায় নিহত লোকজনের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য নাজিম উদ্দিন সকালে নিমতলীর ওই ভবনে আসেন নিহত লোকজনের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে। স্থানীয় এই বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, পুরান ঢাকার রাস্তা সরু, জরুরি মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। এখানকার বাড়ির মালিকদের রাসায়নিক গুদাম ভাড়া দেওয়া উচিত নয়। মহল্লাগুলোতে পঞ্চায়েত কমিটির উচিত এসব দেখভাল করা। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর চলে গেল, আমাদের দুঃখের কথা শেষ হয় না। এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই চাওয়া।’

নিমতলী ছাতা মসজিদের সামনে মানববন্ধন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ তিনটি সংগঠন। তারা পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান অপসারণ, নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত লোকজনের পরিবারকে পুনর্বাসন, পুরান ঢাকায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।

পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার এসব রাসায়নিক গুদাম সরানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। সরকারের যেসব সংস্থা আছে, প্রত্যেকের এখানে দায়িত্ব আছে। ঢাকাবাসীরও দায়িত্ব আছে। টাকার লোভে রাসায়নিকের গুদাম ভাড়া দেবেন না।

নিমতলীর ৪৩ নবাব কাটারার একটি পাঁচতলা ভবনের পাশেই নিহত লোকজনের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে। স্মৃতিস্তম্ভে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজি মো. সেলিম, ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন, সাবেক সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বংশাল থানা আওয়ামী লীগ, নবাব কাটারা সমাজকল্যাণ সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-পরিবেশবাদী সংগঠন।