কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে রিকশাভ্যানে করে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে নিতে একজন খুচরা বিক্রেতার খরচ পড়ে কমবেশি ২৫০–৩০০ টাকা। এর বাইরে আড়ত থেকে সবজি ভ্যানে তোলা পর্যন্ত আরও চার জায়গায় টাকা দিতে হয় একজন খুচরা বিক্রেতাকে।
কারওয়ান বাজার থেকে প্রতিদিন পাইকারি দরে সবজি কেনা ২৫ জন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, আড়ত থেকে কেনা সবজি যিনি বহন করেন (মিন্তি) পরিমাণভেদে তাঁকে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। ভ্যানে তোলার আগে পণ্য এক জায়গায় জড়ো করা হয়। সেই পণ্য যাতে চুরি না হয়, সেই তদারকির কাজটি যিনি করেন (ফুট হিসেবে পরিচিত), তাঁকে দিতে হয় ১০০ টাকা। পণ্যভেদে আড়তমালিককে কমিশন দিতে হয় শতকরা ৫-১০ টাকা (যত টাকার পণ্য কেনা হয় তার ওপর এই হিসাব)। এরপর কারওয়ান বাজার ছেড়ে নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার পথে বাজার কমিটি নিয়োজিত ব্যক্তিকে (লাইনম্যান) চাঁদা দিতে হয় রিকশা হলে ১০ টাকা আর রিকশাভ্যান হলে ২০ টাকা। এ ছাড়া সবজি পরিবহন করা রিকশা বা ভ্যান যদি ব্যাটারিচালিত হয় (অবৈধ অটো), তাহলে কারওয়ান বাজার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত লাইনম্যানকে দিতে হয় আরও ২০ টাকা।
সব মিলিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে টাউন হল পর্যন্ত সবজি পরিবহনে ব্যয় হয় প্রায় ১ হাজার ৬৫০ টাকা। একটি ভ্যানে ৩০০ কেজি সবজি তোলা হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি সবজি পরিবহনে খুচরা বিক্রেতার খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা। তবে টাউন হল বাজারে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি সবজি ২২–৩৭ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গতকাল ভোরে মানভেদে কারওয়ান বাজারের আড়তে প্রতি কেজি বেগুন (লম্বা) বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। সেই বেগুন টাউন হল বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা বেশি দামে। এই প্রতিবেদক দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখেন ৫০ টাকায় কেনা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। একইভাবে ৭০ টাকায় কেনা বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ১০০ টাকায়।
খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে প্রতি কেজিতে দাম বাড়ে প্রায় ১০ টাকা। তাঁরা প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ১০ টাকা লাভ করার চেষ্টা করেন। তবে খুচরা বিক্রেতাদের দেওয়া খরচের হিসাব বাদেই তাঁরা লাভ করছেন প্রতি কেজিতে অন্তত ২০ টাকা। আড়ত থেকে টাউন হল পর্যন্ত সবজি নিয়ে আসার পেছনে সব ব্যয় যোগ করার পরও বেশি লাভ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনজন সবজি বিক্রেতা বলেন, সময় বুঝে ব্যবসা করতে হয়। বছরের সব সময় এক রকম যায় না।
গতকাল দুপুরে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা ইব্রাহিম ব্যাপারীর দোকানে লম্বা বেগুন ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারিতে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় কিনেছেন বলে প্রথমে দাবি করেন তিনি। যদিও গতকাল ভোরে কারওয়ান বাজারে বেগুন পাইকারিতে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এটি জানানোর পর ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, এখন বেগুনের চাহিদা ভালো। অনেক সময় তাঁদের লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। এখন চাহিদা ভালো থাকায় সেই লোকসান পোষানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
গতকাল কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে শসা প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা, ধনেপাতা ৫০-৬০ টাকা, করলা ৩৫-৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৩০-৩৫ টাকা, লাউ (মাঝারি ১টি) ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। দুপুরে টাউন হল বাজারে শসা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধনেপাতা ৮০-১০০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০-১০০ টাকা, পটোল ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০-৬০ টাকা এবং লাউ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল।
টাউন হলের সবজি বিক্রেতা রায়হান আহমেদ বলেন, পাইকারিতে পণ্য কেনার সময় বাছাবাছির সুযোগ থাকে না। কিন্তু এখানে ক্রেতারা বেছে বেছে কেনেন। অনেক সময় ১০ কেজি পটোলে এক-দেড় কেজি নষ্ট বের হয়। তাই কেনা দামের লাভ দেখলেই হয় না। কাঁচামালের লাভের হিসাব মেলানো কঠিন বলে জানান তিনি।
টাউন হল বাজার থেকে গতকাল দুপুরে ৭০ টাকায় ১ কেজি করলা কেনেন গৃহিণী রাবেয়া আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খুচরা বিক্রেতারা প্রায়ই বলেন, সবজির দামের ঠিক নেই। প্রতিদিনই কম–বেশি হয়। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা সব সময় বেশি দামেই বিক্রি করেন। মানুষ কখনো কমের দেখা আর পান না।