একযোগে ৭ হাজারের বেশি মানুষের অংশগ্রহণে আয়োজিত পরিচ্ছন্নতা অভিযানের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নগর ভবনের সামনে সাড়ম্বরে এই স্বীকৃতিপ্রাপ্তি উদ্যাপনের খবর এখনো টাটকা। অথচ এই নগর ভবনের প্রাঙ্গণেই আবর্জনার স্তূপ, ঘোড়ার আস্তাবল—সব মিলিয়ে চিরচেনা আবর্জনাময় রাজধানীর প্রতিচ্ছবি। সেখানে কোনো পরিবর্তন নেই।
গতকাল বুধবার সিদ্দিক বাজার থেকে নগর ভবনে ট্রেড লাইসেন্স করতে এসেছেন আবদুর রাজ্জাক। নগরবাসীর মনের কথাই যেন বললেন তিনি, নগরীর রাস্তাঘাট পরিষ্কার না করে এই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কী দরকার ছিল! এ ধরনের রেকর্ডের চেয়ে বাস্তবে রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন করা বেশি জরুরি। বর্জ্যের দুর্গন্ধ ও ধুলাবালির কারণে সড়কে চলাচল করাই দায়।
গত ১৩ এপ্রিল গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত সড়কে প্রতীকী ‘ঢাকা পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ করেছে ডিএসসিসি। সেখানে ঝাড়ু হাতে ৭ হাজার ২১ জন লোক অংশগ্রহণ করেছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর সোমবার এই খবরটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার নগর ভবনের সামনে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এই স্বীকৃতিপ্রাপ্তি উদ্যাপন করেন।
ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বচ্ছ ঢাকা গড়ায় নগরবাসীকে সচেতন করতে প্রতীকী এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে পুরো রাজধানী পরিচ্ছন্ন না হলেও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। আর নগরীর রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।
বাস্তবচিত্র : গতকাল বুধবার বেলা দুইটা। নগর ভবনের সীমানার ভেতর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেখা গেল বর্জ্যের স্তূপ। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাই সেখানে বর্জ্য ফেলছেন। শুকনো আবর্জনায় আগুন জ্বলছে। এতে নগর ভবনের এই অংশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এই আবর্জনার পাশে পুরোনো বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ বিভিন্ন অব্যবহৃত মালামাল ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। দক্ষিণ ফটকসহ বিভিন্ন স্থানেও আবর্জনা স্তূপ হয়ে থাকতে দেখা গেছে।
আগা সাদেক লেন থেকে নগর ভবনে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিএসসিসির কাজ হলো নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। সেখানে নগর ভবনের সীমানার ভেতর বা আশপাশে আবর্জনার স্তূপ থাকা কাম্য নয়। এ অবস্থা থেকেই বোঝা যায়, ডিএসসিসি নাগরিকদের কী সেবা দিচ্ছে।
এদিকে নগর ভবনের সীমানা থেকে ২০০ মিটার পশ্চিমে আনন্দ বাজার। সেখানে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচে গড়ে উঠেছে ঘোড়ার আস্তাবল। ঘোড়ার বর্জ্য রাস্তার ওপর ছড়িয়ে আছে। নাক-মুখ চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। অন্যদিকে গোলাপ শাহ মাজার থেকে বঙ্গবাজার পর্যন্ত নগর ভবনের সামনের সড়কে গড়ে উঠেছে অবৈধ লেগুনাস্ট্যান্ড। হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন হকারেরা। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আনন্দ বাজারের মুদি দোকানি জামাল হোসেন বলেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে উড়ালসড়কের নিচের এই অংশে ঘোড়ার আস্তাবল গড়ে উঠেছে। ডিএসসিসি প্রায়ই অভিযান চালিয়ে এসব ঘোড়া সরিয়ে দেয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহেও অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পরই আবার ঘোড়া নিয়ে ফিরে আসেন মালিকেরা।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগর ভবনের বর্জ্য রাখতে দক্ষিণ পাশে একটি কনটেইনার আছে। সেটি ভরে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বর্জ্য সরিয়ে ফেলা হয়। আর কেউ হয়তো সিগারেট খেয়ে শেষাংশ না নিভিয়ে ওখানে ফেলেছিল, তা থেকেই বর্জ্যে আগুন ধরেছে। আস্তাবল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চার-পাঁচ দিন আগেও আস্তাবলটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু লোকজন আবার ঘোড়া রাখছেন। শিগগিরই শহীদ নগরের বেড়িবাঁধ এলাকায় ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরে আবার আস্তাবল উচ্ছেদ করা হবে। এরপরও কেউ উড়ালসড়কের নিচে ঘোড়া রাখলে সেসব ঘোড়া জব্দ করা হবে।