নকশার বাইরে ৯১১টি দোকান
বাথরুমের জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে দোকান। এমনকি লিফটের জায়গা ও মানুষের হাঁটার পথ থেকে শুরু করে কোনো জায়গাই বাদ দেওয়া হয়নি। এভাবে একটি বিপণিবিতানেই নকশার বাইরে ৯১১টি দোকান তৈরি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে এসব দোকানে ব্যবসাও করছিলেন। এখন নকশাবহির্ভূত এসব দোকান ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিপণিবিতানটির নাম ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২। ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের ঠিক দক্ষিণ পাশেই এর অবস্থান। করপোরেশনের এমন উদ্যোগে বিপাকে পড়েছেন দোকানিরা। তাঁরা বলছেন, করপোরেশনকে ভাড়া দিয়েই এত দিন তাঁরা এসব দোকান চালিয়ে আসছেন। এমন সিদ্ধান্তে তাঁদের পথে বসতে হবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিপণিবিতানের নকশাবহির্ভূত দোকান এবং এর সার্বিক পরিস্থিতি জানতে একটি কমিটি গঠন করে দেন। করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি এই বিপণিবিতানে নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে এসব উচ্ছেদের সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশে মেয়র সম্মতি দিয়ে নকশাবহির্ভূত এসব দোকান উচ্ছেদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২–এ তিনটি ভবন রয়েছে। এগুলো এ, বি ও সি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। তবে দোকানিরা এ ব্লকের নাম দিয়েছেন সিটি প্লাজা, বি ব্লকের নগর প্লাজা এবং সি ব্লকের নাম দিয়েছে জাকের সুপার মার্কেট।
করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ জানায়, এ ব্লক তথা সিটি প্লাজায় ৩০৮টি, বি ব্লক তথা নগর প্লাজায় ২৯২টি এবং সি ব্লক তথা জাকের সুপার মার্কেটে ৩১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে। এই তিনটি মার্কেটের চারতলা পর্যন্ত নকশায় এ ব্লকে ১৭৬টি দোকান, বি ব্লকে ১৭৬টি এবং সি ব্লকে ১৭৯টি—মোট ৫৩১টি দোকান ছিল।
করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ জানায়, এ ব্লক তথা সিটি প্লাজায় ৩০৮টি, বি ব্লক তথা নগর প্লাজায় ২৯২টি এবং সি ব্লক তথা জাকের সুপার মার্কেটে ৩১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ জানায়, আজ মঙ্গলবার মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। পর্যায়ক্রমে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান ভেঙে দেওয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
নগর প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান তৈরি করে তা অস্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে প্রশাসকের আমলে লিফটের জায়গায়, মানুষের হাঁটার জায়গায়, সিঁড়িতে এবং বিপণিবিতানের সামনের ফুটপাতের দোকান অস্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। পার্কিংয়ের জায়গায় যাঁরা দোকান পেয়েছেন, তাঁদের করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু ফুটপাতসহ অন্য জায়গায় নকশাবহির্ভূত দোকানগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তবে এসব দোকান থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, উচ্ছেদ না করে আপাতত তাঁদের এক মাস সময় দেওয়ার জন্য তাঁরা মেয়রের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু মেয়র তাঁদের অনুরোধ রাখেননি। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের মার্কেটের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় (এই তিনতলায় সংস্কারকাজ চলমান) দোকান বরাদ্দের অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে মেয়র তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
সিটি প্লাজার একজন দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আট বছর আগে তিনি ফুটপাতের একটি দোকান ৬০ লাখ টাকায় কিনেছেন। গত মেয়রের শেষ সময়ে ফুটপাতের ওই দোকানের সামনের এক হাত জায়গা বাড়ানোর কারণে তাঁর কাছ থেকে মার্কেট কমিটি আরও ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। যাঁরা ফুটপাতে ব্যবসা করছেন তাঁদের কমবেশি সবাইকেই দোকানের জায়গা বাড়াতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এখন করপোরেশন বলছে, এসব উচ্ছেদ করা হবে। একটি মার্কেটে তাঁর তিনটি দোকান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব দোকান ভেঙে ফেললে তাঁকে পথে বসতে হবে।
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ বলছে, বিপণিবিতানগুলোর পার্কিং এবং মানুষের হাঁটার জায়গায় দোকানপাট গড়ে ওঠায় গুলিস্তান এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএসসিসির মালিকানাধীন মার্কেটগুলোতে নকশাবহির্ভূত কোনো দোকান থাকবে না।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রথম আলোকে বলেন, নকশাবহির্ভূত এসব দোকানের মধ্যে কয়েকটি সাময়িক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ না দিলেও ফুটপাতে এবং মানুষের হাঁটার জায়গায় অনেক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। অস্থায়ী বরাদ্দপত্রে করপোরেশন চাইলে যেকোনো সময় উচ্ছেদ করতে পারবে, এমন নির্দেশনা ছিল। পর্যায়ক্রমে ডিএসসিসির মালিকানাধীন সব মার্কেটের নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদ করা হবে।