ধানমন্ডিতে নারীদের জয়িতা

বেডকভার তো আছেই, এর সঙ্গে মিলিয়ে একই কাপড়ে নকশা করা ঘরের পাপোশ, টিস্যু বক্সও। জামদানি শাড়িতে নতুনত্ব আনতে করা হয়েছে এমব্রয়ডারির কাজ। নারীদের অন্তর্বাস সব এক জায়গায় রাখার জন্য টিস্যু বক্সের আদলে বাক্স। আরও আছে নকশিকাঁথা, চাদর, নবজাতকের কাঁথা, ন্যাপকিন, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, বেতের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী, ঘি, সরিষার তেল, খই, মুড়ি—একই ছাদের নিচে। দোকানের মালিক ও বিক্রয়কর্মী—সবাই নারী।
এসবই পাওয়া যাবে ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় জয়িতা ফাউন্ডেশনে। ২৪ হাজার বর্গফুটের দুটি তলায় নারী উদ্যোক্তাদের স্টল রয়েছে মোট ১৩৯টি। এর মধ্যে ১০টি খাবারের দোকান, সাতটি কৃষি উৎপাদিত পণ্যের এবং বাকিগুলো হস্তশিল্পের। এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্যোগ। মহিলা অধিদপ্তর পরিচালিত জয়িতা কর্মসূচি থেকে এখন ফাউন্ডেশনে পরিণত হয়েছে।
কেনাকাটা করতে করতে খিদে লাগতেই পারে। তুলনামূলক কম খরচে ঘরে তৈরি হালকা নাশতা থেকে শুরু করে ডাল, মাছ, ভাত খাবার খাওয়ার সুযোগ আছে এখানে। এই খাবারের দোকানও সামলাচ্ছেন নারীরা। এ ছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গা। নারীদের নামাজের স্থান এবং বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে এখানে। অনেক নারী উদ্যোক্তা বুটিকের ব্যবসার পাশাপাশি দরজিরও কাজ করছেন। ক্রেতারা কাপড় কিনে সেখানেই বানানোর জন্য অর্ডার দিতে পারছেন। এখানে নারী ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি।
গত শনিবার সরকারি ছুটির দিন বিকেলে জয়িতায় গিয়ে দেখা গেল, কিছু দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও বেশির ভাগ দোকান অনেকটাই ফাঁকা। তীব্র গরমের কারণে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম বলে তাঁরা জানালেন।
এখানে জয়িতার কার্যক্রম শুরু ২০১১ সালে। তখন থেকেই ব্যবসা করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘পুঁজির দরকার। কিন্তু আমরা পুঁজি পাই না। মাসে দোকানের ভাড়া দিই পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু বেচাবিক্রি নাই।’ আবার রাজবাড়ীর শারমীন রহমানের মতো কোনো কোনো উদ্যোক্তা হাসিমুখেই জানালেন, এবারের বৈশাখে বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। নিয়মিত ক্রেতার উপস্থিতিও বেড়েছে।
কয়েকজন উদ্যোক্তা অভিযোগ করলেন, অনেকেই খরচ সামলাতে না পেরে দোকান ছেড়ে দিয়েছেন। জয়িতা কর্তৃপক্ষ ঢাকার বাইরের তৃণমূলের নারী উদ্যোক্তাদের রাজধানীর ক্রেতাদের চাহিদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে তা তেমন কার্যকর হয়নি।
তবে ক্রেতা কম থাকলেও যাঁরা কিনছেন, তাঁদের মুখে তৃপ্তির হাসি। মোহাম্মদপুরের মৌমিতা লাজবন্তী জানালেন, তিনি এখানে প্রায়ই জিনিস কিনতে আসেন। এখান থেকে পণ্য কেনার পর তাঁকে কেউ ঠকিয়েছে, তা মনে হয় না।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়িতা ব্র্যান্ড ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে, তা দাবি করব না। এ ব্র্যান্ড মাত্র পাঁচ বছরে পা দিল। প্রতিষ্ঠা পেতে এবং ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটু সময় লাগবেই। তবে এর মধ্যেই জয়িতার খাবার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পয়লা বৈশাখসহ বিশেষ দিন উপলক্ষে জয়িতাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে জয়িতা ফাউন্ডেশনের ১৬ তলাবিশিষ্ট নিজস্ব ভবন তৈরি হবে।’