দুর্জয় আর অবন্তিকা ‘সত্যিকার বাঘের বাচ্চা’

টগর আর বেলির ঘরে জন্ম নিয়েছে ছেলে দুর্জয় আর মেয়ে অবন্তিকা
ছবি: আশরাফুল আলম

বেঙ্গল টাইগার দম্পতি টগর আর বেলির ঘরে জন্ম নিয়েছে ছেলে শাবক দুর্জয় আর মেয়ে শাবক অবন্তিকা। দুর্জয়-অবন্তিকার নাম রেখে  জন্মনিবন্ধন করার অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করেই অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায়। এখানেই এই দুই শাবক তাদের মায়ের সঙ্গে থাকছে।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটা করে দুই শাবকের নাম রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং চিড়িয়াখানার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা লাল ফিতা কেটে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে খাঁচার পর্দা সরিয়ে দুই শাবককে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন।

করোনাকালে গত ২৬ মে দুই শাবকের জন্ম হয়েছে। নামকরণের আনুষ্ঠানিকতার কারণে এত দিন ওদের জন্মের খবর গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি। অন্যদিকে লকডাউনের কারণে চিড়িয়াখানায় এখন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। আজ গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্য অতিথিদের উপস্থিতি দুই শাবক ও তাদের মা খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি। একটু পরপর গর্জন করে মা বাঘ বিরক্তি প্রকাশ করছিল আর মায়ের অনুকরণে দুই শাবকও মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ করছিল। জন্মের পর দুর্জয় আর অবন্তিকা আজকেই তো প্রথম এত মানুষকে একসঙ্গে দেখল।

টগর আর বেলির ঘরে জন্ম নিয়েছে ছেলে দুর্জয় আর মেয়ে অবন্তিকা
ছবি: আশরাফুল আলম

চিড়িয়াখানায় সর্বশেষ ২০১৬ সালে বাঘের বাচ্চা জন্ম নিয়েছিল। এত দিন পর আবার নতুন অতিথির আগমনে চিড়িয়াখানায় আজ ছিল উৎসবের আমেজ। চিড়িয়াখানার পরিচালক চিকিৎসক মো. আবদুল লতীফ সারাক্ষণই ব্যস্ত ছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা বাঘের বাচ্চাদের ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়লে পরিচালক বারবার বলতে থাকেন, ‘বাঘের বাচ্চারা ভয় পাবে, আপনারা দ্রুত সরে আসুন, ওদের খুব বেশি বিরক্ত করবেন না।’

বাঘের বাচ্চাদের বাবা ছাড়া কেন রাখা হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে আবদুল লতীফ প্রথম আলোকে বলেন, বাবা পশুদের মধ্যে নিজের বাচ্চাকে মেরে ফেলার প্রবণতা থাকে। তাই ওদের জন্মের আগে থেকেই মা বাঘকে আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছে। বাচ্চাদের বয়স পাঁচ মাস হলে বাচ্চাদের আলাদা খাঁচায় দিয়ে দেওয়া হবে।

দর্শনার্থীদের জন্য বাঘের বাচ্চা উন্মুক্তকরণের আগে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, মানুষকে ‘শক্তিশালী’ বা ‘প্রভাবশালী’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে বাঘের বাচ্চা বিশেষণ লাগানো হয়। তবে এখন সবাই সত্যিকার বাঘের বাচ্চা দেখবেন। দুর্জয় মানে যাকে সহজে জয় করা যায় না আর অবন্তিকার কাছাকাছি শব্দের মানে হচ্ছে রানী।

টগর আর বেলির ঘরে জন্ম নিয়েছে ছেলে দুর্জয় আর মেয়ে অবন্তিকা
ছবি: আশরাফুল আলম

মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে চিড়িয়াখানার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, বর্তমানে চিড়িয়াখানা অনেকটাই আধুনিক বা উন্নত মানের হয়েছে, চিড়িয়াখানার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে দর্শনার্থীদের তখন আর সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশের চিড়িয়াখানা দেখতে যেতে হবে না। মন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৯ আগস্ট থেকে চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে।

বাঘের বাচ্চা উন্মুক্তকরণের পর মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রতিকী হিসেবে ১৬টি কানি আর নিশি বক প্রকৃতিতে ছেড়ে দেন। পরে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মোট ২৪৬টি কানি ও নিশি বক প্রকৃতিতে উন্মুক্ত করবে। সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ার কারণেই বক উন্মুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন জাতীয় চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য প্রথম উন্মুক্তকরণ করা হয়েছিল। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একরের চিড়িয়াখানায় ১৯৮১ সালের ১ জুলাই খুলনা অঞ্চল থেকে একটি পুরুষ এবং ১৯৯০ সালে ভারত থেকে তিনটি স্ত্রী ও দুটি পুরুষ বেঙ্গল টাইগার সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে মোট বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টি। চিড়িয়াখানায় প্রথম বাঘের বাচ্চা জন্ম নেয় ১৯৯০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। গত ২৬ মে দুর্জয় আর অবন্তিকাসহ ৪০টি বাঘের বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা এবং দেশের বাইরে এই বাঘ অনুদান ও বিনিময় করা হয়েছে। একেকটি বাঘ বয়োপ্রাপ্ত হতে সময় লাগে ৩ থেকে ৫ বছর। এদের গর্ভধারণকাল ৯০ থেকে ১০০ দিন। একসঙ্গে এক থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চার জন্ম ওজন থাকে ৭৮০ থেকে ১৬০০ গ্রাম।এক থেকে দুই সপ্তাহে ওদের চোখ ফোটে। জন্মের পর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দাঁত ওঠে। চার থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বাঘের বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ খায়। আড়াই থেকে তিন মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি মাংস খাওয়া শুরু করে। স্বাভাবিক অবস্থায় বাঘ ১২ থেকে ১৫ বছর বেঁচে থাকে। আর আবদ্ধ রাখা হলে ১৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।