নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের এক যুগ
জিডির তদন্তই শেষ হয়নি
শুধু থানায় একটি জিডি করে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছিল।
এক যুগ আগে এই দিনে (২০১০ সালের ৩ জুন) পুরান ঢাকার নিমতলীতে আগুনে পুড়ে মারা যান ১২৪ জন। এ মৃত্যুর ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। মামলা না হলেও শুধু থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছিল।
এক যুগ পার হলেও সেই জিডির তদন্ত হয়নি। কবে নাগাদ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এক যুগ আগের নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো জিডি হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই। নথিপত্র না ঘেঁটে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। একই কথা বলেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল হাসান।
তবে ঘটনার সময় বংশাল থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) দায়িত্ব পালন করা আবুল হাসান আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছিল। জিডির সূত্র ধরে ১২৪ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। ওই জিডির আর তদন্ত হয়নি।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার ৪৩ নবাব কাটরা ভবনটির নিচতলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পাঁচতলা সেই ভবনটি এখন ছয়তলা করা হয়েছে, লোকজনও থাকছেন। ওই ভবন ঘেঁষে নিহত ব্যক্তিদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। আগুনে ওই বাড়ির বাসিন্দা ফরিদউদ্দিনসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়।
নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেদিন মা হারান সৈয়দ আশিক আলী। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাসার ঠিক উল্টোদিকের বাসায় সেদিন আগুন লেগেছিল। মা সৈয়দা ফৌজিয়া বেগম সেদিন ওই বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের কুণ্ডলী পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে মা মারা যান। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।
সৈয়দ আশিক আলী জানান, সেদিন রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এই মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ৯ বছরের মাথায় (২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭৭ জন মারা যান। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, রাসায়নিক গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ ঘটনায় করা মামলায় ভবনের মালিক সহোদর মোহাম্মদ হাসান সুলতান ও হোসেন সুলতানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।
পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদাম কত, তার সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব বা তথ্য নেই। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় করা সরকারি এক জরিপ বলছে, সেখানে রাসায়নিক ব্যবসার ১ হাজার ৯২৪টি পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, পুরান ঢাকায় দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের প্রায় ১৫ হাজার গুদাম আছে।
রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ, আরমানিটোলা, ইমামগঞ্জ, ইসলামবাগ, মিটফোর্ড, হাজারীবাগ ও কোতোয়ালিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রাসায়নিকের অসংখ্য গুদাম।