কী হবে ওয়াহেদ ম্যানশনের?
অগ্নিকাণ্ডের ছয় মাস পার হলেও চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটি সংস্কার বা ভেঙে ফেলার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে সেখানে আবার দোকান চালুর চেষ্টা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী। ইতিমধ্যে ভবনের নিচতলার আটটি দোকানে পলেস্তারা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার উড়ে যাওয়া দেয়ালে নতুন করে ইটের গাঁথুনি বসানো শুরু হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে দুর্ঘটনায় চারতলা ভবনটি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় তলায় ছিল রাসায়নিকের গুদাম। সেখান থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত। এতে ওই তলার দেয়াল উড়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় ভবনের ভবনের বাসিন্দা এবং আশপাশের ৭১ জন মারা যান। ওই দুর্ঘটনার পর ভবনটি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) কয়েকটি সেবা সংস্থাকে রাখা হয়। পরে ভবনটি ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি আট দিনের মাথায় প্রতিবেদন জমা দেন।
ভবনটি সংস্কার করে ব্যবহার করা যাবে বলে প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, পলেস্তারা করে ও খুঁটি সংস্কার করে ওয়াহেদ ম্যানশন ব্যবহার করা যাবে।
সুপারিশ করার পরও ভবনটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার চুড়িহাট্টায় গিয়ে ভবনটি আগের অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ভবনটির দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত পোড়ার চিহ্ন স্পষ্ট। নিচতলায় দোকানগুলোতে নতুন করে পলেস্তারা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ইটের গাঁথুনি দেওয়া শুরু হয়েছিল। তবে এখন বন্ধ কয়েছে। ভবনের সামনে টাঙানো ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রধান ফটকে তালা লাগানো। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ভবনমালিক মো. হাসান ও মো. শহীদকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে ওয়াহেদ ম্যানশন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বাড়ির মালিক।
চুড়িহাট্টার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, চুড়িহাট্টা মোড়ে এলে এই ভবনের দিকে তাকালে সেই দিন রাতের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। এখন বাড়িটি সংস্কার করলে দুর্ঘটনার ছাপটা মুছে যেত। ঝুঁকিপূর্ণ হলে ভবনটি ভাঙা হোক। আর সুযোগ থাকলে সংস্কার করা হোক। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ভবনের নিচের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক দোকানি মারা গেছেন। তাঁদের স্বজনেরা মাসখানেক আগে এই ম্যানশনের নিচতলার দোকানগুলো পলেস্তারা শুরু করেছিলেন। কিন্তু খবর পেয়ে তা বন্ধ করে দেন ডিএসসিসির অঞ্চল-৩–এর কর্মকর্তারা।
এদিকে ভবনটি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছে রাজউক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে গড়ে ওঠা ভবনটি নির্মাণে ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা’ মানা হয়নি। এমন অনুমোদনহীন ভবন রাজউক সংস্কারে অনুমোদন দেবে কি না, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে না। আর ভাঙার ব্যাপারেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভবনমালিক বাড়ি বৈধ করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশন রাজউকের অনুমোদন নেই। আর বুয়েটের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুনসী মো. আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে ওয়াহেদ ম্যানশন বসবাসের অনুপযোগী। কিন্তু ভবনটি এখনই ধসে পড়ার আশঙ্কা নেই। এটি আদৌ থাকবে, না ভেঙে ফেলা হবে? সংস্কার হলে কবে হবে? এসব বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।