‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’ বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠান
মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট, নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশ্বের প্রথম সেবামূলক কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। মহতী এ উদ্যোগের ৫০ বছর পূর্তিতে লেখক-গবেষক আবু সাঈদ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের লেখক ও গবেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার যৌথভাবে লেখেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর কাঁটাবনের কবিতা ক্যাফেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন ‘মুক্ত আসর’ এ বই নিয়ে ‘বইয়ের আলোচনা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সূচনা বক্তব্য দেন স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা। লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকারকে উত্তরীয় ও বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইতিহাসবিদ এ কে এম শাহনাওয়াজের সভাপতিত্বে বইয়ের আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনায় প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলেন, ‘মুক্ত আসরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ২০১৫ সাল থেকে। নানা উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করছি। করোনার সময় আমরা বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বিশ্বে কী ধরনের কাজ হয়েছে, সেটার ওপর আমরা কাজ করব। দেখা গেল, বিশ্বে এই প্রথম সেবামূলক কনসার্ট নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু বই আকারে তা প্রকাশিত হয়নি। আমরা বিভিন্ন তথ্য-লেখা সংগ্রহের কাজ শুরু করি। প্রায় তিন বছর পর বইটির আলোর মুখ দেখে। আমরা চাই, এ বই বিভিন্ন ভাষা অনূদিত হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক।’
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘১১২ পৃষ্ঠার আকারে ছোট বই হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের তিনটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমি মনে করি, বইয়ের দুই লেখক সুপরিকল্পিতভাবে গ্রন্থের বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন। পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসন “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মাত্র পাঁচ সপ্তাহের প্রস্তুতিতে এত বড় তারকাসমৃদ্ধ কনসার্টের আয়োজন করেন। এখানে শুধু জগৎখ্যাত শিল্পীদের গান শোনার জন্য ৪০ হাজার মানুষ একত্র হয়েছিল, এমনটি কিন্তু নয়, এখানে সমবেত হয়েছিল এটা দেশের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তাঁদের এই আয়োজনের মাধ্যমে গভীরভাবে স্মরণ করি।’
এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘ছোট এ বইয়ে প্রতিটি শব্দে একটি দায়িত্বশীলতা রয়েছে। ছোট কিন্তু অনেক বড় একটি ক্যানভাস এ বইয়ে। আমি পড়েছি এবং বিস্মিত হয়েছি। “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতাম না, এই বইয়ের মাধ্যমে জানিয়েছে। আমি এত দিন শুধু জানতাম, এর মহান নায়ক জর্জ হ্যারিসন। কিন্তু এ বই পড়ে জানলাম, না, হ্যারিসন নন, মহানায়ক হলে পণ্ডিত রবিশঙ্কর। তিনিই ভেবেছেন, তিনিই সমস্ত চিন্তা করেছেন এবং তিনি তাঁর বন্ধুকে উদ্বুদ্ধ করে আয়োজন করেছেন। এ বইয়ের মধ্য দিয়ে নতুন কিছু জানলাম। বইয়ের বিন্যাসটা অত্যন্ত সুচিন্তিত। আমার জানার মতো এমন বই প্রকাশিত হয়নি। গ্রন্থটি একটি অনবদ্য সৃষ্টি, যা প্রথমবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তৈরি করে আমাদের মাথায় কড়ানাড়া দিয়েছেন। এর জন্য আমি দুই লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ।’
আবু সাঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের কাহিনিগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। এ বইয়ের মাধ্যমে আমরা তা করার চেষ্টা করছি। “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” বিশ্বজনমত গঠনের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। আমরা চেষ্টা করেছি দুই বন্ধু পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের এ উদ্যোগের সঙ্গে যেসব বিশ্বখ্যাত তারকা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের কথাগুলো তুলে ধরতে। বইটি ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশ করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।’
অনুষ্ঠানে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের সঙ্গে যাঁরা যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করা হয়। পাঠকপর্বে বক্তব্য দেন মুক্ত আসরের উপদেষ্টা ফারাহ দিবা আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, এবিসি রেডিওর নাদিয়া নিতুল ইসলাম, ইশরাত জাহান, কে জামান পূর্ণিমা, দেবব্রত নীল, নিঝুম, পুলক, শিবম প্রমুখ।
আলোচনা ও পাঠকের প্রশ্ন–উত্তর শেষে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট নজরুলসংগীতশিল্পী উম্মে রুমা ও মুক্ত আসরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শায়লা রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মুক্ত আসরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়শা জাহান নূপুর ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক নাফিজা রহমান মৌ। বইটি প্রকাশিত হয় স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন থেকে। বইটির মূল্য ২৮০ টাকা।
বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে মুক্ত আসরের সঙ্গে সহ–আয়োজক স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন ও বইবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘বইচারিতা’।