>
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ১১ শিক্ষার্থী
- ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পরামর্শদাতা মাত্র ১ জন
- হতাশা, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তাঁরা আত্মহননের পথ বেছে নেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গত তিন বছরেই আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ কী, তা জানার চেষ্টা করেনি কর্তৃপক্ষ। নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষণ্নতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তাঁরা আত্মহননের পথ বেছে নেন।
নানা কারণে চাপে থাকা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দপ্তর রয়েছে। ‘ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তর’ নামের এই দপ্তরে স্থায়ী কাউন্সেলর বা পরামর্শদাতা (মনোবিজ্ঞানী) রয়েছেন মাত্র একজন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী প্রায় ৩৮ হাজার। এত শিক্ষার্থীর জন্য একজন কাউন্সেলরকে একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আবার যেসব শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, এর পেছনের কারণ কী, তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। পরামর্শদান দপ্তরও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে না।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাবীন প্রথম আলোকে বলেন, হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য একজন কাউন্সেলর একেবারেই অপ্রতুল। আবার পরামর্শ দপ্তর সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অনেকে কিছু জানেন না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
প্রক্টরের কার্যালয় ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। ২০১৭ সালে আত্মহত্যা করেন তিন শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেন একজন। ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন চার শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শদান দপ্তরে স্থায়ী কাউন্সেলরের পদ আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মেহ্জাবীন হক।
গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তরুণ হোসেন। রাজধানীর হাজারীবাগের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাঁর সহপাঠীরা জানান, বিভাগের পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন স্যার এ এফ রহমান হলের এই আবাসিক ছাত্র। পরের মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সন্ধ্যাকালীন এমবিএ কোর্সের ছাত্র তানভীর রহমান এমবিএ ভবনের ৯ তলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের কাউন্সেলর (মনোবিজ্ঞানী) সাইফুন্নেসা জামান প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রবলেম’ বা মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা নিয়ে এখানে আসেন৷ পরীক্ষাভীতি, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ভোগা—এ ধরনের সমস্যা নিয়েও আসেন অনেক শিক্ষার্থী।
পরামর্শদান দপ্তর সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের মাস্টার্স বা এমফিল পর্বের ৩০ জন শিক্ষার্থী তাঁদের পড়ালেখার অংশ হিসেবে একটি সেমিস্টার (ছয় মাস) এই দপ্তরে খণ্ডকালীন পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন।
ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের জনবল বাড়ানোর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব শিক্ষক, ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ চিঠিতে শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁরা যেন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য ও জীবন নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক কথাবার্তা বলেন।