অনলাইনে না পেরে লাইনে, তবু পেলেন না কাঙ্ক্ষিত টিকিট

কমলাপুর স্টেশনে টিকিটের জন্য ভিড়ছবি: দীপু মালাকার

বারিধারার বাসিন্দা ওমর ফারুক গতকাল শনিবার সকাল আটটায় টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলেন। সে সময় টাকা কেটে নেওয়া হলেও তাঁর টিকিট আসেনি ই–মেইলে। অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে গতকাল বেলা দুইটার দিকে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন ওমর ফারুক। আজ রোববার সকালে তিনি বলেন, ‘৩০ নম্বর সিরিয়াল ছিল। আমি এসির টিকিট কাটতে আসছিলাম। কিন্তু নন–এসি টিকিট পেলাম। জানি না এসির টিকিট এত দ্রুত কীভাবে শেষ হলো।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রিমন দাস কমলাপুরে টিকিট কাটতে এসেছেন। নীলফামারী যাবেন তিনি। বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের সময় বাড়ি যেতে এই ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। কয়েক মাস আগে রেলের টিকিট অনলাইনে বিক্রির প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে সহজ লিমিটেডকে দেওয়া হলো। অথচ তারা প্রস্তুত ছিল না। ঈদের কয়েক মাস আগে কেন পরিবর্তন করা হলো। গতকাল অনলাইনে অনেকবার চেষ্টা করেছি টিকিট কাটার। লগইনই করতে পারিনি। যখনই লগইন করি, তখনই টিকিট সোল্ড আউট।’

রিমন আরও বলেন, ‘একটি বগিতে ৯২টি আসন থাকে। এর অর্ধেক পাওয়া যাবে অনলাইনে, অর্ধেক কাউন্টারে। অথচ আজকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পাঁচজনের পর এসির টিকিট শেষ। এখন আমার তিনটা এসির টিকিট লাগবে। অথচ শোভন টিকিট কিনতে হচ্ছে। তাহলে রাতে এসে এত কষ্ট করে কী লাভ?’

রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটতে আসা অনেকে এভাবে অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ জানান। অনেকে আবার এসি টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ জানান। আজ দ্বিতীয় দিনে ২৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। গতকালের তুলনায় আজ স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় বেশি।

অনলাইনে টিকিট বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে নিয়ে কমলাপুরের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল আটটায় যখন অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়, সবাই তখন একসঙ্গে টিকিট কেনার চেষ্টা করেন। এ সময় সার্ভার কিছুটা জ্যাম হয়। আবার বেলা ১১টার দিকে টিকিট কাটার উদাহরণ আছে। সবকিছুই করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ সেটা কতটুকু যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে, সেটাও একটা বিষয়। একটা টিকিটে হাজার লোক হিট করে।

সহজের সার্ভারটি বেশি চাপ নেওয়ার উপযোগী কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্টেশন ব্যবস্থাপক বলেন, ‘সহজ বলে তারা এক মাস হলো এ সার্ভার তৈরি করেছে। সহজ এই টিকিটের সেবা সহজ করতে আরও সময় চাচ্ছে। কাউন্টারের সার্ভার একবারও ডাউন হয়নি। সহজ এক মাস হলো এসেছে। এখনো তাদের সেবা মূল্যায়ন করার সময় হয়তো আসেনি। এত ভিড় আমি কোথাও দেখিনি। যেহেতু আসনসংখ্যা নির্দিষ্ট, তাই যাত্রীসংখ্যাও সীমিত হবে।’

মো. আকরামুল হোসেনের বাসা রামপুরায়। তিনি গতকাল দিবাগত রাত দুইটার সময় রেলস্টেশনে এসেছেন। আকরামুল বলেন, ‘টিকিট কাটতে অনেক কষ্ট। স্টেশনেই সাহ্‌রি করেছি। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়েছে। তবে এখন টিকিট কেটে অনেক ভালো লাগছে।’ চুয়াডাঙ্গার দুটি শোভন চেয়ারের টিকিট পেয়েছেন তিনি।

সাহ্‌রির পরপর স্টেশনে এসেছেন সম্রাট সাঈদ। সুন্দরবন এক্সপ্রেসের দুটি টিকিট কেনা শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যে টিকিট চেয়েছিলাম, সেটাই পেয়েছি। শোভন চেয়ারের টিকিট পেয়েছি। অনেকেই চাদর বিছিয়ে বসে ছিলেন। মানুষের হয়রানি–ভোগান্তির শেষ নেই।’

তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী মো. সোহেল হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় বারিধারার বাসা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। আজ সকাল ১০টার দিকে তিনি টিকিট কাটতে পারলেন। তবে তিনি কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাননি। সোহেল ক্ষোভ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসির টিকিট চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। টিকিট বিক্রি শুরুর ১৫ মিনিট পরেই এসির টিকিট শেষ।’

কমলাপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি টিকিট নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বেশি আসছে।

এ বিষয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক প্রথম আলোকে বলেন, এসব ট্রেনে এসি কোচ আছে একটি করে, যার আসনসংখ্যা ৫৫। এর অর্ধেক চলে যায় অনলাইনে, বাকি অর্ধেক কাউন্টারে। সে ক্ষেত্রে প্রথম তিন থেকে চারজনের পরে আর টিকিট পাওয়া যায় না। এ কারণে এসি টিকিট না পাওয়ার বিষয়টি থাকতেই পারে।

পাঁচ বছর আগেও কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদের সময় এমন হতো, এখনো হচ্ছে, মানুষের ভোগান্তি কবে কমবে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন নতুন কোচ–ইঞ্জিন সংযোজন করা হচ্ছে।

মাসুদ সারওয়ার আরও বলেন, ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করছেন, যাতে কোনোভাবে টিকিটসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ উত্থাপিত না হয়। আমরা নিশ্চিত করতে পারছি কাউন্টার থেকেই যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছে। যেহেতু আইডির মাধ্যমে টিকিট কাটা হচ্ছে, সেহেতু টিকিট বিক্রিতে কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।’

স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের বিভ্রান্তি ও হয়রানি প্রসঙ্গে স্টেশন ব্যবস্থাপক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিড়টা আমরাও দেখছি, আপনারা দেখছেন। এর মধ্যে দিয়ে এটাই প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।’