চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ হতে পারে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সম্ভাব্য এই তারিখ ধরে আজ বৃহস্পতিবারই ছিল ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস। এদিন বিকেলে অফিস-আদালতের ছুটির সময়ের পর থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিড় বাড়তে শুরু করে। অফিস শেষ করে অনেকেই সরাসরি চলে আসেন রেলস্টেশনে।
ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন আজ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ সময় কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে কিংবা নির্ধারিত সময়ের তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ছেড়ে যায়। তবে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর পৌঁছাতে না পেরে গন্তব্যের ট্রেন ধরতে পারেননি।
আজ বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে নির্ধারিত সময়ে মোট চারটি ট্রেন ছেড়ে যায়। ট্রেনগুলো হলো সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস।
বিকেলে যাত্রীর ভিড় বাড়লেও ট্রেনের ভেতরে দাঁড়ানো যাত্রীর ভিড় খুব একটা দেখা যায়নি। ওই চারটি ট্রেনের মধ্যে শুধু যমুনা এক্সপ্রেসের ভেতরে দাঁড়ানো যাত্রীর ভিড় কিছুটা বেশি দেখা গেছে। তবে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির বগিগুলোয় কমলাপুর স্টেশন থেকে আসন ফাঁকা নিয়ে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
ট্রেন ধরতে পারেননি অনেকেই
এবারের ঈদযাত্রায় অতীতের বিভিন্ন সময়ের মতো ট্রেনের সূচি বিপর্যয় কিংবা ট্রেন ছাড়তে অনেক দেরি হয়েছে, এমন ঘটনা এখনো ঘটেনি। স্টেশন থেকে ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে। তবে যাত্রীদের কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশনে পৌঁছাতে না পেরে ট্রেন ধরতে পারেননি।
আজ বিকেলে যে চারটি ট্রেন ছেড়েছে সবগুলোর কিছু যাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন পৌঁছাতে পারেননি। অনেকে আবার স্টেশনে পৌঁছাতে পারলেও শেষ মুহূর্তে দৌড়ে চেষ্টা চালিয়েও ট্রেনে উঠতে পারেননি। এমন যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মাসুম মিয়া-কেয়া বেগম দম্পতি। সঙ্গে দুই মেয়ে। এক মেয়েকে কোলে ও আরেক মেয়েকে হাতে ধরে দৌড়ে সিরাজগঞ্জ ট্রেনের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন মাসুম মিয়া। স্ত্রী কেয়া বেগমেরও চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন্তু ভারী ব্যাগের কারণে দৌড়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তাঁদের চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় ট্রেন।
পরে মাসুম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী–সন্তানেরা বাসায় প্রস্তুত ছিলেন সঠিক সময়েই। কিন্তু তাঁর নিজেরই অফিস থেকে বের হতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। যে কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশনে আর পৌঁছাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বাড়ি যাবেন কীভাবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনি আর তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা
কমলাপুর রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। স্টেশনে ঢোকার পথেই র্যাব, রেল পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে টহল দিতে দেখা গেছে। রেলের কর্মীরাও কঠোরভাবে যাত্রীদের টিকিট যাচাই করে স্টেশনে ঢুকতে দিচ্ছিলেন।
এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে মুঠোফোন ছিনতাইচেষ্টার অভিযোগে এক তরুণকে আটক করে রেল পুলিশের সদস্যদের নিয়ে যেতে দেখা গেছে। রেল পুলিশের এক সদস্য তখন জানান, ছেলেটি ট্রেন ছাড়ার পরে একজনের মুঠোফোন ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছেন। তবে আটক করে নেওয়ার সময় ছেলেটিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ফোন নিয়ে গেছে, আমি সেটা ধরার চেষ্টা করেছিলাম। আমি ছিনতাইকারী না, আমি স্টুডেন্ট।’
দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিটের জন্য ভিড়
অনেকেই অনলাইনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে তাঁরা স্টেশনে গিয়েছেন আর দাঁড়িয়ে যাত্রার টিকিট কেনার চেষ্টা করছেন। আজ বিকেলে যেসব কাউন্টারে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হয়, সেখানে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কোনো ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে ট্রেনের মোট আসনের (শোভন ও সুলভ শ্রেণির) ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রয় করা হচ্ছে। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাহিদা বাড়ছে বলেও জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।
টিকিট কিনতে লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা বলছেন, চেষ্টা করেও তাঁরা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি৷ ঈদে বাড়ি ফিরতে হবে, তাই স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।