বাংলা একাডেমিতে চলছে জমজমাট বৈশাখী মেলা
বাংলা একাডেমিতে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। দেশি কাঁচামালে তৈরি ও দেশের কারিগরদের হাতে বানানো পণ্য মেলায় স্থান পেয়েছে। কাপড়, চামড়া, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, ব্যাগ, জুতা, শতরঞ্জিসহ ঘর সাজানোর নানা জিনিস। আছে মাটির টেপা পুতুলও।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেলায় এবার সব মিলিয়ে ৯৮টি স্টল রয়েছে। সোমবার পয়লা বৈশাখে মেলা শুরু হয়েছে। চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
সোমবার ‘বৈশাখী মেলা-১৪৩২’-এর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মঙ্গলবার ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকেলে মেলা ঘুরে মোটামুটি ভিড় চোখে পড়ে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মেলায় আসেন। মেট্রোরেল থাকায় দূরদূরান্তের মানুষের বেশ সুবিধা হয়েছে। উম্মে ফারহানা নামের এক নারী এসেছেন মিরপুর থেকে। তাঁর সঙ্গে ছিল দুই সন্তান। বাংলা একাডেমির ফাঁকা জায়গায় বেশি দৌড়াদৌড়ি করছিল তারা।
বাচ্চা সামলাতে সামলাতে ফারহানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) মানুষের ভিড়ে বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়ার সাহস পাইনি। কিন্তু বাচ্চারা টেলিভিশনে পয়লা বৈশাখের নানা দৃশ্য দেখে বায়না ধরেছে। তাই আজ বের হলাম।’
মেলায় এসে কিছুটা বিপাকেই পড়েছেন এই মা। দুজনের মধ্যে কনিষ্ঠজন চার বছরের মেয়ে রুশমা সব কিছু নিয়ে বাড়ি ফিরতে চায়।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তুলনামূলকভাবে সোমবার পয়লা বৈশাখে ভিড় বেশি ছিল।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া এ মেলায় কুটির ও কারুশিল্পের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে লোকজ বিনোদন। পুকুরপাড়ে শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে কাঠের নাগরদোলা আর স্লিপার। এ জায়গায় ভিড় একটু বেশি।
পাশেই রয়েছে কিছু খাবারের দোকান। সেখানে পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে সবার জন্য ডাবের পুডিং অর্ডার করেছিলেন আবদুল বাসেত। জানালেন, গরমের জন্য সব খাবারের মধ্যে এটিই তাঁদের পছন্দ হয়েছে।
মেলায় বাংলা একাডেমি মুদ্রিত বইয়ের বিশেষ মূল্যহ্রাসে বিক্রির দোকানও আছে। সেখানে ২০০০ সালের আগে প্রকাশিত বই ৭০ শতাংশ, ২০০১—২০১০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত বই ৫০ শতাংশ ও ২০১১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকাশিত বই ২৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
বইয়ের দোকানে মূল্যহ্রাসের বই কিনছিলেন এক পাঠক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বাংলা বছরের প্রথম দিন উৎসবের। এ অনুভব এই জনপদের চিরকালের। একসময় গ্রামের মেলাগুলো ছিল আরও রঙিন। তবুও নগরে যে এটুকু ছোঁয়া পাওয়া গিয়েছে তাই অনেক।