অভিন্ন শ্রম আইন ও ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবি শ্রমিকদের

শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দীন আহমেদ। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেছবি: সংগৃহীত

অভিন্ন শ্রম আইন ও সংস্কার, বেতনসহ ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ কয়েক দফা দাবিতে আজ শুক্রবার শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টার দিকে এই সমাবেশ ও র‌্যালির আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখনো ইপিজেড ও ইপিজেডের বাইরে ভিন্ন আইন থাকায় শ্রমিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে। এক দেশে দুই আইনের পরিবর্তে অভিন্ন গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও শ্রমিকদের স্বার্থে শ্রম আইন অধ্যাদেশ করার দাবি জানান তাঁরা।

নতুন অধ্যাদেশে শ্রমিকদের প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন, নিবন্ধন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, নারী শ্রমিকদের ঝরে পড়া রোধে প্রসবকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা, বেতনসহ ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবি করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন বা ৪ মাস। অথচ সরকারি পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস। তাঁরা যৌননিপীড়নবিরোধী নীতি, অভিযোগ সেল ও অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা কার্যকর করার আহ্বান জানান।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত শ্রম সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের বিকল্প নেই। সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও প্রকট আয়বৈষম্যের কারণে শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়ছে। শ্রম সংস্কার কমিশন শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ মজুরি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার ও মঙ্গল নিশ্চিতে সুপারিশ তৈরির কাজ করে যাচ্ছে।

অভ্যূত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অভিন্ন গণতান্ত্রিক শ্রমআইনসহ বেশ কয়েকটি নামে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে র‌্যালি করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি
ছবি: সংগৃহীত

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষের জান-জীবিকা-জবানের অধিকার নিশ্চিতে আইন পরিবর্তন ও শ্রম আইন সংস্কার এখন সময়ের দাবি। সামনে শ্রম আইনের নতুন অধ্যাদেশ তৈরির কাজ হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকের ইউনিয়ন চর্চার বাধা দূর করার তাগিদও রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এখনো ইপিজেড ও ইপিজেডের বাইরে ভিন্ন আইন হয়ে শ্রমিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্বিত হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে। এক দেশে দুই আইনের বদলে অভিন্ন গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রয়োজন।

সমাবেশ আরও বক্তৃতা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসান আশরাফ, শ্রমিকনেতা মিজানুর রহিম চৌধুরী, অঞ্জন দাস, নুরুল ইসলাম, সাবিনা ইয়াসমিন, শামীম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা মজুরি আন্দোলনের শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তাঁরা বেক্সিমকোসহ বিভিন্ন লে–অফ করা কারখানা খুলে দেওয়া এবং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবি জানান।