‘পরের প্রজন্মকেও এ রকম প্রদর্শনী দেখানো উচিত’

‘জুলাই-জাগরণ’ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ (বাঁয়ে) ও অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, ২৬ জানুয়ারিছবি: দীপু মালাকার

‘জুলাই-জাগরণ’ প্রদর্শনীতে শহীদদের ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে সাজানো ‘শহীদ স্মরণ’ কর্নারে দেখা হলো সাজ্জাদ হোসাইনের সঙ্গে। প্রবাসী এই তরুণ ২০২৪ সালের জুন মাসে, অর্থাৎ অভ্যুত্থানের আগের মাসে পর্তুগাল থেকে দেশে এসেছিলেন। তবে সন্দীপে অবস্থান করায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তেমন বড় কোনো খবর তিনি পাননি। পরে ধীরে ধীরে ঘটনাপ্রবাহ জেনেছেন।

প্রদর্শনী নিয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, অনলাইনে জেনেই দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন,  ‘কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, পরিবার নিয়ে আসা উচিত ছিল। সবাই অনেক কিছু জানতে পারত। শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত জিনিস দেখে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। প্রথম আলো যতটা পেরেছে, পুরো আন্দোলনটাই আমাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।’
এ লেভেলপড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া হাসান এসেছেন ধানমন্ডি থেকে। তিনি বলেন, ‘ছোট করে পুরো ইতিহাস জানলাম। গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল সব ঘটনাই স্থান পেয়েছে। যারা এখন ছোট, মানে পরের প্রজন্মকেও এ রকম প্রদর্শনী দেখানো উচিত। তারাও জানুক, শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়ে কীভাবে আন্দোলন করেছে।’

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা ঘটনা তুলে ধরতে প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজন ‘জুলাই-জাগরণ’ প্রদর্শনী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দোতলায় প্রদর্শনী  চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। সঙ্গে থাকবে আরও নানা আয়োজন।

মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের  চারজন শিক্ষার্থী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রদর্শনীতে থাকা নানা ছবি দেখছিলেন। জানতে চাইলাম,  ‘কেমন লাগছে এই আয়োজন?’ শিক্ষার্থী ওমর রাফি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগের অনেক ছবি বড় আকারে দেখলাম। এটা অন্য রকম অনুভূতি। শিক্ষার্থীরা চাইলে কী করতে পারে, সেটাই এই আন্দোলনের শিক্ষা। এখানে এসে আবারও ওই সময়টাকে অনুভব করেছি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই আন্দোলনকে এভাবে তুলে ধরার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ।’

প্রদর্শনীর ‘সত্যে তথ্যে জুলাই’ অংশে আছে পত্রিকা, প্রতিবেদনের নিদর্শন। ছবি আছে ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ এবং ‘জুলাই-জাগরণ’ অংশে। ‘রক্তাক্ত স্মারক’ অংশে সাজানো আন্দোলন দমন করতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী বুলেট ও রাবার বুলেটের খোসা, ছররা গুলি, গ্রেনেডের পিন, কাঁদানে গ্যাসের খোসা এসব।

‘জুলাই-জাগরণ’ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি
ছবি: দীপু মালাকার

‘আবু সাঈদ: আন্দোলন ও শিল্পের প্রতীক’ অংশে আছে তাঁকে নিয়ে করা শিল্পী শহীদ কবীরের শিল্পকর্ম, শিল্প তৈরির উপকরণ ও প্রক্রিয়ার ভিডিও চিত্র। এর পাশাপাশি প্রদর্শনীতে দুটি কক্ষের মনিটরে দেখানো হচ্ছে  অভ্যুত্থানের সময়ের প্রথম আলো অনলাইনে সম্প্রচারিত প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন ঘটনার  ভিডিও।

আহমাদুল্লাহ নামের একজন প্রবীণ শিক্ষক ঘুরে দেখছিলেন সব অংশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই আগস্টের সময়টা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেটা ভালো লেগেছে ৷ তবে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের আরও ছবি দেওয়া যেত। হয়তো সংবেদনশীল বলেই দেওয়া হয়নি।’

দুপুরে কাসপের নামে রাশিয়ার একজন নাগরিক আয়োজন দেখতে আসেন। তিনি জানান, ‘আমরা মূলত অন্য দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানতেই আসি। এই আন্দোলন আপনাদের জীবনের একটা অংশ ছিল। সেটা নিয়েও জানতে পারলাম।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন