কমলাপুরে ঈদযাত্রায় স্বস্তি, নেই বাড়তি ভিড়

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছে এই পরিবারটি। সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে পোষা বিড়ালটিকেও। ঢাকা, ২৪ মার্চছবি: সাজিদ হোসেন

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। আজ সোমবার ছিল ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক অভিভাবক আগেভাগে বাড়ি ফিরছেন। আর যেহেতু ঈদযাত্রার প্রথম দিন, তাই কমলাপুর রেলস্টেশনে তেমন ভিড়ও ছিল না।

কমলাপুর থেকে ঈদযাত্রার প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় আজ সকাল ছয়টায়। যাত্রীরা স্বচ্ছন্দেই গেছেন। সকাল ও দুপুরে কমলাপুরে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে বিকেলের দিকে স্টেশনে হালকা ভিড় দেখা গেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, আজ আন্তনগর, মেইল ও এক্সপ্রেস মিলিয়ে মোট ৬৬টি ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। এর মধ্যে রাত ১০টা পর্যন্ত বেশির ভাগ ট্রেন ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে। শুধু বুড়িমারী এক্সপ্রেস দেড় ঘণ্টা আর এগারো সিন্ধুর এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে গেছে।

বিকেলে কমলাপুর স্টেশনে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা বিনতে আনোয়ারের সঙ্গে। এবারের ঈদযাত্রায় মায়ের সঙ্গী তিনি। যাবেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে মায়ের হাতে মেহেদির নকশা এঁকে দিচ্ছিলেন। ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন কি না, জিজ্ঞেস করতেই নাফিসার মুখে হাসি ফুটে উঠল। বললেন, ‘ঈদে বাড়ি যেতে ভালো লাগে। আত্মীয়স্বজনের মিলনমেলা আমাকে টানে। ঢাকায় একা একা ঈদ করতে ভালো লাগে না।’

যানজট এড়াতে আগেভাগেই কমলাপুর রেলস্টেশন পৌঁছেছেন মা-মেয়ে। ট্রেন ছাড়ার আগে প্ল্যাটফর্মে বসে মায়ের হাতে মেহেদির নকশা করে দিচ্ছেন মেয়ে। ঢাকা, ২৪ মার্চ
ছবি: মেহেদী হাসান খান পাভেল

নাফিসাদের ট্রেনের নাম ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় ঢাকা থেকে ছাড়ার কথা। এত আগে রেলস্টেশনে আসার কারণ জানিয়ে তাঁর মা মাহমুদা আক্তার বললেন, ‘ঈদে ট্রেনযাত্রায় শুরুর দিকে ভোগান্তি একটু কম থাকে জেনেই আগেভাগে টিকিট কেটেছি। আজ অনেক আগেই স্টেশনেও এসেছি। যাতে ঢাকার যানজটে কোনোভাবেই ট্রেন মিস না করাতে পারে। এখন নিশ্চিন্তে বাড়িতে যাব পরিবারের সঙ্গে ঈদে আনন্দ করতে।’

মাহমুদা আক্তারের সঙ্গে কথা শেষ করে আরেকটু সামনে গেলাম। সেখানে মা-বাবার কোলে সাত মাসের শিশু আদিয়া। খুনসুটিতে মেতেছে সে।

আদিয়ার বাবা মনসুর আহমেদ জানালেন, মেয়ের জন্মের পর এটা তাদের প্রথম ঈদ। বাড়ির সবাই আদিয়ার জন্য বসে আছে। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা।

ঈদযাত্রায় কোনো ভোগান্তিতে পড়েছেন কি না, জানতে চাইলে মনসুর আহমেদ বলেন, ‘না, তেমন ভোগান্তি তো দেখি না। ভিড়ও তেমন নেই। এবার ট্রেনযাত্রায় বেশ স্বস্তি বোধ করছি।’

খানিক দূরে দেখা হলো ছয়জন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বাড়িতে যাচ্ছে দল বেঁধে। অনেক দিন পর মাদ্রাসা থেকে ছুটি পেয়েছে তারা।

ট্রেন ছাড়তে কিছুটা সময় বাকি। এই ফাঁকে প্ল্যাটফর্মে খেলায় মেতেছে শিশুরা।  ঢাকা, ২৪ মার্চ
ছবি: সাজিদ হোসেন

শিক্ষার্থীদের একজন মোহাম্মদ আসলাম বলল, সে মুন্সিগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। পড়াশোনার চাপে সেখানে ইচ্ছেমতো খেলাধুলা করতে পারে না। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করার পাশাপাশি বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে।

ঘরমুখী মানুষের নিরাপত্তায় কমলাপুর রেলস্টেশনে কাজ করেছে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মীরা।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘যাত্রীরা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন। আমাদেরও ভালো লাগছে দেখে। যাত্রী হয়রানি কমাতে আমরা ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় থাকব।’