উত্তরায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা, সংঘর্ষ, রাবার বুলেট
রাজধানীর উত্তরায় গণমিছিল কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হন বলে জানা গেছে।
আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন কলেজের প্রধান শাখার সামনে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
তানভীর নামের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জুমার নামাজের পর শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে আসি। এ সময় জমজম টাওয়ারের দিক থেকে লোহার রড, লাঠি, রামদা ও অস্ত্রসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একটি মিছিল আসে। এসেই তারা আমাদের লাঠিপেটা শুরু করে। মেয়েদের হেনস্তা করে। একজন ছাত্রীর গলা টিপে ধরেন উত্তরা পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক (জুয়েল)। আমার বন্ধু জোবায়ের সিয়াম এর প্রতিবাদ করলে জুয়েল হুমকি দিয়ে বলেন, বেশি কথা বললে গুলি করে দেব।’ ছাত্রলীগের এই নেতা অবশ্য প্রথম আলোর কাছে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুক্রবার জুমার নামাজের পর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদ, ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদ ও আজমপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল। ঘুরে দেখা যায়, তিনটি জায়গায় সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী রড, লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জমজম টাওয়ারের মোড়ে অবস্থান নেন। সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান ও কয়েকজন কাউন্সিলরসহ নেতা–কর্মীরা দীর্ঘ সময় স্লোগান ও বক্তৃতা করেন সেখানে।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে কয়েক শ শিক্ষার্থী মাইলস্টোন কলেজের সামনে জড়ো হলে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের মারধর করে বাসায় চলে যেতে বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে সংঘর্ষ বাধে।
উত্তরায় সংঘর্ষে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র তাহমিদ হুযাইফা আহত হয়েছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জানান, তাহমিদের চোখে শটগান এবং কপাল ও কানে রাবার বুলেটের আঘাত লেগেছে। চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন বাসায় আছেন।
১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের একজন বাসিন্দা জানান, শিক্ষার্থীরা দৌড়ে বিভিন্ন গলির বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের বের করে এনে মারধর করেন। কয়েকজন ছাত্রীকেও লাঠিপেটা করা হয়।
প্ল্যাকার্ড হাতে এক জোবায়দা
উত্তরার উত্তর-পশ্চিম এলাকার ১১ নম্বর সেক্টর ঘিরে যখন পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছিল, তখন আজমপুরে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মোড়ে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান শিক্ষার্থী জোবায়দা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মাথায় বেশ কয়েকজন নারী জোবায়দাকে রাস্তা থেকে চলে যেতে চাপ দেন। তাঁদের চাপের এক পর্যায়ে জোবায়দাসহ তিনজন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দিকে চলে যান।
ওই নারীদের একজন নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে জানান, তাঁর নাম রুমা আজাদ। আরেকজন সাদিয়া ইসলাম, তিনি উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বলে জানান। রুমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। রাস্তায় এগুলো দেখতে চাই না।’