সমাবেশে শহিদুল আলম
‘গণহত্যার প্রতিবাদ করতে না পারলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাব’
যে দেশ বোমাবর্ষণ করে, তারাই আবার মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, উল্লেখ করে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেছেন, যার যার অবস্থান থেকে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধিতা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ করতে না পারলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাব।’
পশ্চিমা বিশ্বের মদদে ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধ ও গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনি শহীদ শিশুদের স্মরণে আজ সোমবার সকালে এক সমাবেশে এ কথা বলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে এ সমাবেশের আয়োজন করে দৃক পিকচার লাইব্রেরি।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান ভয়ানক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলম বলেন, একদিন না একদিন ইসরায়েলকে জবাবদিহি করতেই হবে। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনসহ পুরো বিশ্বের সব শিশু যেন সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, সেই দায় আমাদের সবার। এই গণহত্যার প্রতিবাদ করতে না পারলে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেই দেশ বোমাবর্ষণ করে, তারাই মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোও এ বিষয়ে নীরব থাকে। আমাদের যার যার অবস্থান থেকে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধিতা করতে হবে।’
সমাবেশে বাংলাদেশের পতাকা ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ফিলিস্তিনের প্রতি একাত্মতা জানানো হয়। সমাবেশে অংশগ্রহকারীদের হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল নানা প্রতিবাদী স্লোগান। ব্যানারে ছিল ইসরায়েলি নৃশংসতায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশু ৭ মাস বয়সী আতায়া, যমজ দুই ভাই আয়সাল ও আসের (৩), রিম (৩), ওমর বিলাল (৪), রাজাব (৬), সেলি (৫), আবু জামেয়া (৭), দাহদৌহর (১৫) ছবি।
একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘যদি আমি মরে যাই, চলে যাই, যদি যুদ্ধে শহীদ হয়ে যাই, কোনো দিনও সেই আরব শাসকদের ক্ষমা করব না, যারা আমাদের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে। দিনগুলো বড্ড কষ্টের ছিল, খাবার ছিল না, পানি ছিল না, এত অল্প বয়সে আমার চুল পেকে যায় অবরোধে। দোয়া করি, আল্লাহ যেন কোনো দিনও তোমাদের ক্ষমা না করে, তোমাদের মাফ না করে। আল্লাহর কসম, আমি যেয়ে সাত আসমানের স্রষ্টার কাছে নালিশ করব। মা, আমাকে ক্ষমা করো। তোমায় বড্ড ভালোবাসি। আমার জন্য কেঁদো না।’ কথাগুলো হাতে লিখে একটি উইল রেখে গিয়েছিল ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল-হুসেইনি।
সমাবেশে গাজার শিশুদের নিয়ে নিজের লেখা দুটি কবিতা ‘তোমাকে আদর করি আমার গাজার সন্তান’ এবং ‘বল দেখি কারা করে পৃথিবীতে যুদ্ধের চাষ?’ আবৃত্তি করে শোনান সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের এই শিশুদের, সন্তানদের, শহীদদের, যোদ্ধাদের আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।’
এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু।