রাজধানীর তিন রুটে ই-টিকিট চালু, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, আজ থেকে গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও আজিমপুর অঞ্চলের ১৫টি বাস কোম্পানির ৭১১টি বাস ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করবে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও আজিমপুর অঞ্চলের সব কোম্পানির বাসে আজ মঙ্গলবার থেকে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় নিয়েও বাসের চালক, চালকের সহকারী এবং যাত্রীদের মধ্যে সন্তোষ ও অসন্তোষ দুটিই দেখা গেছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তাঁদের।

যাত্রীদের অনেকে বলছেন, আগে টিকিট ছিল না। এখন টিকিট দিতে হওয়ায় বাসের সুপারভাইজাররা ইচ্ছেমতো আর ভাড়া আদায় করতে পারছেন না। কিন্তু আগে সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে বেশি ভাড়া নেওয়া হতো। কোনো কোনো গন্তব্যে আবার আগের চেয়ে ভাড়া কিছুটা বেড়েছে বলেও জানালেন অনেক যাত্রী।

এদিকে বাসের চালক, চালকের সহকারী ও পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকিটের ব্যবস্থা থাকলেও অনেক যাত্রী টিকিট নিতে চান না। তাঁরা আগের মতো ভাড়া দিতে চান। অনেকে আবার টিকিটে যে ভাড়া আসে, সেটাই দেন। এ ছাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়েও যাত্রীদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে হচ্ছে; বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী, আজ থেকে ওই তিন অঞ্চলের ১৫টি বাস কোম্পানির ৭১১টি বাস ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করবে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় চলাচলকারী দেশের সব বাস কোম্পানিই ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনা হবে।

ই-টিকিটিং চালুর প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আসাদগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাসগুলোতে ই-টিকিট বিক্রির ‘পজ মেশিন’ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাসের যাত্রীরাও টিকিটে আসা নির্ধারিত ভাড়ার টাকা পরিশোধ করছেন।

তবে যাত্রীদের অনেকে ভাড়া আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন। তাঁদের একজন মিলন সরকার। তিনি ইট ভাঙার যন্ত্রের চালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু কাজের জন্য তাঁকে প্রতি সপ্তাহেই দুই থেকে তিন দিন বাসে করে মগবাজার অথবা ইস্কাটনে যেতে হয়। মিলন বলেন, ভাড়া আগের চেয়ে ৫ টাকা বেড়েছে। ইস্কাটনের ভাড়া আগে দিতাম ১৫ টাকা। এখন ২০ টাকা দিতে হচ্ছে।

মিলনের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাগর হাসান নামের স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার বলেন, আগে আমাদের বাসের চেকার (যাত্রীর সংখ্যা গণনা করেন যিনি) ছিল মগবাজার উড়ালসড়কের আগে। তিনি চেকারের আগে নামতেন। তাই ৫ টাকা কম রাখা যেত। এখন মেশিনে স্টপেজ অনুযায়ী ভাড়া ধরা আছে।

বাসচালকেরা বলছেন, আগে ভাড়া নিজেদের মনঃপূত না হলেই যাত্রীরা ভাড়ার চার্ট চাইতেন, টিকিট চাইতেন কিংবা নানান ঝামেলা আর তর্কাতর্কি করতেন। এখন আর সেসব ঝামেলা নেই। মেশিনে চাপ দিয়ে টিকিট দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

আবু তাহের নামের এক বাসচালক বলেন, সকাল থেকে আপ-ডাউন একটি ট্রিপ দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, কোনো ঝামেলা হয়নি। যাত্রীরা টিকিট দেওয়ায় খুশি।

তবে সলিমুল্লাহ নামের আরেক চালক জানান, যাত্রীদের নিয়ে ঝামেলা না থাকলেও শিক্ষার্থীদের ভাড়া নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। এখানে অর্ধেক (হাফ) ভাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখানেও ৫-৬ টাকা ভাড়া দিতে চান।

ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও বাসের কর্মীদের মধ্যে তেমন কোনো বাগ্‌বিতণ্ডা না হলেও ই-টিকিটিংয়ে ভাড়া কাটার যন্ত্র ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেক বাসের সুপারভাইজার। যন্ত্রটি ব্যবহারে নানা জটিলতা পাচ্ছেন বলে জানান অনেকেই।

মালঞ্চ পরিবহনের সুপারভাইজার জিহাদুল ইসলাম বলেন, সকালে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সময় মেশিন ঠিক ছিল। ভাড়া কাটতে গিয়ে দেখি, মেশিন কাজ করছে না। পরে প্রথম ট্রিপের ভাড়া আগের মতো আদায় করতে হয়েছে।

জিহাদুল ইসলাম আরও বলেন, অনেকে টিকিট চেয়েছিলেন। মেশিন চলছে না দেখিয়ে দুঃখিত বলে তাঁদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে হয়েছে।

এই বাসের যাত্রী একটি সরকারি হাসপাতালের নার্স সুমি জান্নাতের দাবি, ভাড়া আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আগে ১০ টাকা ভাড়া দিতেন। এখন একই গন্তব্যে তাঁকে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।

ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের কারণে ট্রিপপ্রতি মোট ভাড়া আদায়ের পরিমাণ কমে গেছে বলেও জানালেন বাসচালক ও সুপারভাইজাররা। যে কারণে কোনো কোনো বাসচালক নিজেরা আজ বাস চালানো থেকে বিরত থেকে বদলি চালক দিয়ে বাস চালাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের একটি বাসের চালক বলেন, প্রতিটি গন্তব্যের ভাড়া ২-৩ টাকা কমে গেছে। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে। দিন শেষে পকেটের টাকাও ভরা লাগতে পারে। তাই তিনি নিজে না চালিয়ে বদলি চালক দিয়েছেন।

তরঙ্গ প্লাস বাস কোম্পানির সুপারভাইজার মো. বাবু বলেন, আগের মতো ভাড়া আদায়ের অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। তাই গাড়ির কর্মীরা এখনো ই-টিকিটিংয়ের বিষয়টির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। তবে কোনো গাড়ির চলাচল বন্ধ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির ৩০টি বাসের সব কটিই রাস্তায় চলছে।’