সাকরাইন উৎসবে ঘুড়িতে রঙিন আকাশ
পৌষের শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুরান ঢাকায় শুরু হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। স্থানীয় বাসিন্দারা পৌষের শেষ দিনের এই ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবকে বলেন ‘সাকরাইন’। এই উৎসবে শামিল পুরান ঢাকার স্থানীয় আবালবৃদ্ধবনিতা ঘুড়ি-নাটাই নিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে রঙিন করে তোলেন আকাশ।
শুধু ঘুড়ি ওড়ানোই নয়। সাকরাইনে বাসাবাড়ির ছাদ সাজানো হয় বাহারি রঙের আলোকসজ্জায়। ছাদের ওপর ছিল শিশুদের মেলা, অংশ নিয়েছেন বড়রাও। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয়েছে পিঠা।
এদিন ২২ শ্যামা প্রসাদ চৌধুরী লেন সিলভাস্টার স্কুল ভবনে সাকরাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে রহমতগঞ্জ তরুণসমাজ ও নবচেতনা সমাজকল্যাণ সংঘ অংশ নেয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সী ঘুড়িপ্রেমীদের সমাবেশ ঘটে এখানে।
সাকরাইনের এই আয়োজন ছিল তিন পর্বের। শুরুতে ছিল ‘পুরান ঢাকার সংস্কৃতি ও সাকরাইন’ বিষয়ক আলোচনা। এতে অংশ নেন ইতিহাসবিদ ও গবেষক হাশেম সূফীসহ পুরান ঢাকার অনেক বিশিষ্টজন। তাঁরা সাকরাইন উৎসবের সঙ্গে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও এর সম্পর্ক তুলে ধরেন। পরের পর্বে ছিল পিঠা উৎসব। তৃতীয় পর্বে আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে প্রতিবারের মতো এবার সাকরাইন উৎসবের আমেজ তেমন ছিল না বলে জানালানে লালবাগের বাসিন্দা এ আই জাভেদ। তিনি আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়ানো হলেও এবার ডিজে পার্টি ছিল না। নানা রকম রাজনৈতিক সংকটের কারণে মূলত এবারের সাকরাইন উৎসব পালিত হয়েছে কিছুটা নীরবে। তবে আকাশে ঘুড়ির বর্ণচ্ছটা ছিল সকাল থেকেই, যা চলে মূলত সন্ধ্যা পর্যন্ত।
সাকরাইন উপলক্ষে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ঘুড়ি, নাটাই, সুতা বিক্রি চলে সপ্তাহখানেক ধরে। হরেক রকমের ঘুড়ি, বিচিত্র তাদের নাম আর রঙের বাহার।
তবে এবার ঘুড়ি বিক্রি যে কম হয়েছে, সে তথ্য জানালেন শাঁখারীবাজারের ঘুড়ির দোকানদারেরা। তবে পুরান ঢাকার বিখ্যাত ঘুড়ি তৈরির শিল্পী হাশমত আলী প্রথম আলোকে বলেন ‘ঘুড়ি প্রতিবারের মতো এবারও ১০ থেকে ১২ হাজার বানিয়েছি। দোকানদারেরা কিনে নিয়ে গিয়েছেন সব। এবার আঁতশবাজি ছিল না। ডিজেও বাজে নাই।’