ছাদে শতাধিক যাত্রী নিয়ে কমলাপুর ছাড়ল আন্তনগর ট্রেন, পুলিশের বাঁশি, মাইকে ঘোষণা কাজে এল না কিছুই

ছাদে শতাধিক যাত্রী নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায় একটি আন্তনগর ট্রেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা, ২৯ মার্চ, সকাল সোয়া ১০টার দিকে তোলাছবি: প্রথম আলো

ঈদ এলে বাড়ি ফিরতে ট্রেনের ছাদে চড়ে বসেন অনেকেই। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আপনজনের কাছে ছুটে যান তাঁরা। ট্রেনের ছাদে চড়ে ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে না, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এমন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিবছরেরই চিত্র এটা।

এবার ঈদযাত্রার শুরুর দিকে এ নিয়ে কঠোর ছিল কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার ঈদযাত্রার ষষ্ঠ দিনে এসে সেই চেষ্টায় ছন্দপতন ঘটেছে।

গত পাঁচ দিনের ঈদযাত্রায় অন্তত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রীদের ছাদে উঠে ভ্রমণ করতে দেখা যায়নি। গতকাল শুক্রবার কিছু ট্রেনে অল্পসংখ্যক যাত্রী ছাদে উঠে যাত্রার চেষ্টা করলেও রেল পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নামিয়ে দেন।

আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে একটি আন্তনগর ট্রেন ছাদে শতাধিক যাত্রী নিয়ে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ছাদে উঠে পড়া যাত্রীদের নিচে নামাতে চেষ্টার কমতি ছিল না। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার আগমুহূর্ত তাঁদের চেষ্টা করে যেতে দেখা যায়, কিন্তু ফল মেলেনি।

সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চগড় অভিমুখী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভেতরে যাত্রী ঠাসা। অনেকেই দাঁড়িয়ে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ ট্রেনের বগির দরজা কিংবা দুই বগির সংযোগস্থলেও অবস্থান নিয়েছেন।

এমন সময়ে ট্রেনের সামনের দিকে রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা অনবরত বাঁশি বাজাতে শুরু করেন। মাইকেও কিছু একটা ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড় আর মানুষের কোলাহলে সেই শব্দ অস্ফুট রয়ে যায়। সামনে এগিয়ে ছাদের দিকে তাকাতেই দেখা যায় শতাধিক মানুষের কোমর থেকে হাঁটুর অংশ। ট্রেনের ছাদ ও প্ল্যাটফর্মের ছাদের এ দুইয়ের মাঝে থাকা ফাঁকা অংশটুকুতে একজন মানুষের ওই টুকুই দেখা যাচ্ছিল। দেখা যায়, ছাদে থাকা বেশির ভাগ মানুষ বাঁশির শব্দ আর মাইকে হুঁশিয়ারি শুনে তাঁরা এক বগির ছাদ থেকে অন্য বগির ছাদের দিকে সরে যাচ্ছিলেন, কিন্তু কেউ নামছিলেন না। অপেক্ষা করছিলেন ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা, ২৯ মার্চ
ছবি : প্রথম আলো

ট্রেনের একটি বগির ভেতর দিয়ে অপর পাশে গিয়ে দেখা গেল, ট্রেনের সামনের দিকের তিনটি বগির ছাদে শতাধিক যাত্রী রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবক।

পরে ১০টা ১৬ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুর থেকে রওনা দেয়। ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাদে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেকে হাত নেড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও রেলের কর্মীদের বিদায় জানান।

যদিও ট্রেন ছাড়ার আগে একতা এক্সপ্রেসের পেছনের বগিগুলোর ছাদে উঠে পড়া ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রীকে নামাতে পারেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের কাছ থেকে জরিমানা নেওয়া হয়। পরে তাঁদের বগিতে তুলে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে আগে এসব লোকজন ছাদে ওঠে পড়েন। তখন চেষ্টা করেও তাঁদের আর নামানো যায় না। যদি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এই চিন্তা থেকে বলপ্রয়োগও করা যায় না।