ঈদের দ্বিতীয় দিনে সংসদ ভবন, হাতিরঝিল এলাকায় মানুষের ঘোরাঘুরি

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের এলাকায় আজ অনেকেই নানা খেলনাসামগ্রী নিয়ে বসেছেন। এখানে বেড়াতে আসা মানুষ এসব কিনছেনওছবি: প্রদীপ সরকার

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বকুলতলা। আজ মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিনের বিকেলে দেখা গেল, অনেকে সেই বকুলতলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে সংসদ ভবন দেখছেন। সংসদ ভবনকে পেছনে রেখে অনেকে ছবিও তুলছেন। দর্শনার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খেলনার দোকানও বসেছে।

শুধু সংসদ ভবন এলাকা নয়, নগরীর আরেক বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিলে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। এ চিত্র আজ বিকেল ও সন্ধ্যার।

বিকেলে দেখা যায়, বড় ভাইয়ের পুরো পরিবার ও নিজের মেয়েকে নিয়ে সংসদ ভবন এলাকা ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রিয়াজুল ইসলাম। তাঁরা রাজধানীর উত্তরায় থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। এবার তাঁরা ঢাকায় ঈদ করছেন।

রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁরা ঘুরতে বেরিয়েছেন। প্রথমে যান পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিলে। তবে সেটি বন্ধ পান। তারপর সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। তাঁরা রমনা পার্কেও যান। তবে জাতীয় জাদুঘরে গিয়েও তা বন্ধ পান। এরপর আসেন সংসদ ভবন এলাকায়। রিয়াজুল বলেন, ‘রাস্তায় যানজট নেই। তাই ঘুরে ভালোই লেগেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখলাম, বাচ্চারাও দেখল, জানল। ওদেরও ভালো লেগেছে।’

রিয়াজুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রেজওয়ানা সুলতানা বলে, রমনা পার্কে সে কিছু ফুল দেখেছে, সেগুলো তার ভীষণ ভালো লেগেছে।

ঈদে ঢাকায় ঘোরাঘুরি করা মানুষের অধিকাংশই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতে পারেননি বা যাননি। তাই ঈদকে আনন্দময় করতে একটু সময়ের জন্য হলেও বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এমন আরেকজন মোছা. ফাতেমা। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালে। ঢাকায় থাকেন মগবাজার এলাকায়। ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দিন বাসায় ছিলাম। তাই ছেলে–মেয়েকে নিয়ে সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরতে আসলাম।’

ঈদের ছুটিতে হাতিরঝিলে ভিড় করেছেন নগরবাসী। ঢাকা, ০১ এপ্রিল
ছবি: দীপু মালাকার

হাতিরঝিলের ঘোরাঘুরি

হাতিরঝিলের পাড় ঢেকে আছে নানা প্রজাতির গাছপালায়। সেই পাড়ে থাকা ফুটপাতও গাছে আচ্ছন্ন। আর সেই ফুটপাতে দিয়ে হেঁটে চলেছেন বহু দর্শনার্থী। অনেকে ঝিলের পাড়ে থাকা বেদিতে বসে আছেন। মৃদুমন্দ ছন্দে ঝিম থেকে আসছে বাতাস। সবমিলিয়ে ঈদের দিন হাতিরঝিলে বেশ আনন্দের সঙ্গেই পার করছেন দর্শনার্থীরা।

আজ গোধূলি লগ্নে দেখা যায়, হাতিরঝিলের বেদিতে বসে বেশ কয়েকজন তরুণ গিটার বাজিয়ে গান গাইছেন। আশপাশে বসে থাকা নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরীরা তা উপভোগ করছিলেন। সেখানে লুঙ্গি আর শার্ট পরে বসে ছিলেন ওমর ফারুক খান। তিনি থাকেন তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায়। পেশায় তিনি রিকশাচালক। চালান প্যাডেলচালিত রিকশা।

পড়ন্ত বিকেলে হাতিরঝিলে ইঞ্জিনচালিত নৌকাভ্রমণে বের হয়েছেন অনেকে। ঢাকা, ০১ এপ্রিল
ছবি: দীপু মালাকার

ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে আয়রোজগার ভালো ছিল না। তাই নেত্রকোনার গ্রামের বাড়িতে থাকা স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি। এ কারণে মন ভীষণ খারাপ। সকালবেলা রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। বিকেলে আর রিকশা নিয়ে বের হননি। মন ভালো করতে হাতিরঝিলে এসেছেন। এসে গান শুনছেন। সন্ধ্যার পর কিশোরদের সঙ্গে গানও করবেন বলে জানান।

একটু দূর থেকে কিশোরদের সঙ্গে গানে গলা মেলাচ্ছিলেন ওমর ফারুক। এতে বোঝা গেল, তাঁর গলাও বেশ ভালো।

তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় থাকেন কাজল আক্তার। তাঁর স্বামী আজ সকাল থেকে হাতিরঝিলে আইসক্রিম বিক্রি করছেন। তিনি চার মাস ও আট বছর বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে হাতিরঝিলে আসেন বিকেলে। কাজল বলেন, ‘বড় মেয়ে আসতে চাইছিল, তাই নিয়ে আসলাম। ঈদে ঘোরাও হলো, পরিবারের সবার একসঙ্গে সময় কাটানোও হলো।’