একুশের বইমেলায় মানুষের ভিড়
একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনের বইমেলা ছিল মানুষেরই মেলা। অসম্ভব ভিড়ে ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে’ অবস্থা হয়েছে মেলার মাঠের। নারীরা অনেকেই এসেছেন সাদা–কালো শাড়িতে। এই মেলা স্মৃতিচারণার জন্যও এক চমৎকার আয়োজন।
লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ নামে আহমদ কবির স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হলো গতকাল। প্রয়াত অধ্যাপক আহমদ কবিরের স্মরণে এ গ্রন্থে লিখেছেন আবদুল মোমিন চৌধুরী, আবুল কাসেম ফজলুল হক, সুব্রত বড়ুয়াসহ অনেকে। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত এ স্মারকগ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীর ৫৯টি স্মৃতিগদ্য নিয়ে প্রকাশিত সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে বইটি একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে মেলায় নতুন করে এনেছে মাওলা ব্রাদার্স। সেখানে তখন কবি ফরিদ কবিরের সঙ্গে বাংলা ভাষার চর্চা নিয়ে কথা বলছিলেন ভাষাবিজ্ঞানী, কথাসাহিত্যিক সৌরভ সিকদার। প্রথম আলোকে তিনি বললেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পালিত কন্যার মতো। নিজের মতো বেড়ে ওঠার কোনো শক্তি এই প্রতিষ্ঠানের নেই।’
প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতার মতো মানুষের অসচেতনতা নিয়ে আক্ষেপ শোনা গেল কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদের কণ্ঠে। ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে দাঁড়িয়ে লেখক বললেন, ‘ভিড়ের জন্য শহীদ মিনার থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে মেলায়। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে আজকের এই দিনেও মানুষ জুতা পায়ে হাঁটছেন, দৃশ্যটা মানতে পারছি না।’
একটু পরই স্টুডেন্ট ওয়েজের প্যাভিলিয়নে তখন এক গণমাধ্যমকর্মী খুঁজলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের লেখা জীবন খাতার কয়েক পাতা বইটি। জীবনের খাতায় আসলে কত রকম অভিজ্ঞতা জমা হয়, লিখে না রাখলে হিসাব থাকে না। লেখক সরাফ আহমেদ জার্মানি থেকে বাংলাদেশে এসেছেন চার দিনের যাত্রাপথে। তুষারঝড়ে তুরস্ক বিমানবন্দরে তিনি আটকে যাওয়ার দুই দিন আগে সেখানে ঘটে গেছে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনাটি।
প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে সন্ধ্যায় দেখা গেল, সরাফ আহমেদের জন্য ছুটে এসেছেন তাঁর বন্ধুরা। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন বইয়ের জন্য অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন তাঁরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম শহিদুল হক শুভেচ্ছা জানালেন। প্রথমা প্রকাশন থেকে এসে কথা বললেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।
এর মধ্যে আরেকটি সুন্দর দৃশ্য তৈরি করলেন কালো শাড়ি পরা নওশীন তাবাসসুম। ছবি তুলতে তুলতে বন্ধুকে বললেন, ‘ফেসবুকে লিখে দিস, “না চিনেও চিনি তারে।” নওশীন বললেন, বই তাঁকে আশ্রয় দেয়। বই মানুষের আশ্রয় না হলে এত ভিড়েও মানুষ বইয়ের পাতা ওলটাতে মেলায় আসেন!
কথা সত্যি, না হলে এত ভিড়ের মধ্যেও পাঠক কেন বই খুঁজতে আসবেন! কবি আলতাফ শাহনেওয়াজের গ্রামের লোকেরা যা বলে কবিতার বইটি পাওয়া যাবে বাতিঘরের প্যাভিলিয়নে।
একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে তিন শতাধিক। সন্ধ্যায় মেলার ভেতর আলো জমে উঠেছে আরও আগেই। অববাহিকায় তখন নামছে অন্ধকার। শেষকালে কথাসাহিত্যিক শাহ্নাজ মুন্নী বললেন, ‘এত ভিড়, কিন্তু সব মানুষ যদি একুশের চেতনাটা এভাবেই বুঝত!’