২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কেন বন্ধ

আইন অনুযায়ী, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি পরিশোধে গত এপ্রিল মাসে সীমিত পরিসরে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই ই-পেমেন্ট বা অনলাইনে ফি পরিশোধের সুবিধা চালু করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন। তবে এই ব্যবস্থা চালুর পর মাসখানেক ধরে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ই–পেমেন্ট ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা সরাসরি চলে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, এ খাতে ফি বাবদ আয় সিটি করপোরেশনের তফসিলভুক্ত আয় হিসেবে আলাদা কোডের মাধ্যমে নিজস্ব তহবিলে জমা হতে হবে অথবা তাদের যা খরচ হয়, তার পুরোটা সরকারকে দিতে হবে।

গত মে মাস থেকে দেশের সব পৌরসভায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

ডিএসসিসির মোট ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য নিবন্ধক কার্যালয়গুলোতে গেলে নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে বলে তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

ডিএসসিসির অঞ্চল ২–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট’ কারণে এক মাসের মতো তাঁরা নিবন্ধনের কাজ বন্ধ রেখেছেন। নিবন্ধন বন্ধ রাখার কারণে লোকজনের ভোগান্তির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, অনেককে বুঝিয়ে বলা হচ্ছে কেন বন্ধ রাখা হয়েছে।

সব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়া নিয়ে একমাত্র ডিএসসিসিই আপত্তি জানিয়েছে। ডিএসসিসির নিবন্ধন কার্যালয়ে শুধু জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজই হয় না, অন্যান্য কাজও হয়। তাই এ কার্যালয়গুলোর সব খরচই জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন খাতের নয়।
মো. রাশেদুল হাসান, রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল

জন্ম ও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে কোনো ফি লাগে না। ৪৫ দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে করলে ২৫ টাকা এবং ৫ বছর পর করালে ৫০ টাকা ফি লাগে। এ ছাড়া জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা এবং জন্মতারিখ ছাড়া সনদে অন্য তথ্য সংশোধনের জন্য ফি লাগে ৫০ টাকা।

ই–পেমেন্ট চালুর আগে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ক্ষেত্রে আগে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল। একটি নিবন্ধনের জন্য দুই হাজার টাকা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আদায় করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল ২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো বলেন, নিবন্ধন কার্যালয়গুলোয় এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট চালানে ৫০ টাকাই নেওয়া হতো। অনেকে দোকান থেকে আবেদন করেন, সেখানে তাঁরা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে থাকতে পারেন। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজে সিটি করপোরেশনের আয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় রয়েছে। জনবল, কার্যালয়, সনদের জন্য কাগজ, প্রিন্টিং ইত্যাদি খাতে অনেক খরচ রয়েছে।

ডিএসসিসির মোট ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য নিবন্ধক কার্যালয়গুলোতে গেলে নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে বলে তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন

‘সব খরচ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন খাতের নয়’

ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ই-পেমেন্ট চালুর পর জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের ফি অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। এর আগে হাতে ফি নেওয়া হতো এবং সপ্তাহ শেষে চালান আকারে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ডিএসসিসি জমা করত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। আইনে সুযোগ না থাকলেও এত দিন জন্ম ও মৃত্যু ফি বাবদ আয় সিটি করপোরেশনের তফসিলভুক্ত আয় হিসেবেই গণ্য করা হতো। ই-পেমেন্ট চালু হওয়ায় সব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বাবদ কাজে প্রতিষ্ঠানের কোনো আয় হচ্ছে না। ডিএসসিসির কর্মকর্তারা মনে করেন, যদি কোনো আয় না-ই হবে, তাহলে এ খাতে সিটি করপোরেশন কেন খরচ করবে।

রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন) মো. রাশেদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনকারীদের সুবিধার জন্য সরকারের নির্দেশে তাঁর কার্যালয় ই–পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করেছে। এখন সব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়া নিয়ে একমাত্র ডিএসসিসিই আপত্তি জানিয়েছে। ডিএসসিসির নিবন্ধন কার্যালয়ে শুধু জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজই হয় না, অন্যান্য কাজও হয়। তাই এ কার্যালয়গুলোর সব খরচই জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন খাতের নয়।

মো. রাশেদুল হাসান আরও জানান, সারা দেশের সব সিটি করপোরেশন (১২টি), পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজের খরচ মেটানোর জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন এবং ডিএসসিসি দুটোই স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, ই–পেমেন্টে সব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস তাঁর আপত্তির কথা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে জানিয়েছেন। মন্ত্রী তাঁর একান্ত সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন-৩ অধিশাখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীকে এ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি এ বিষয়ে ডিএসসিসি ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বৈঠকে জানিয়েছেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজে তাঁদের বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ফির টাকা তাঁদের তহবিলে জমা না হলে বছরে এই পরিমাণ টাকা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে সরকারের।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে যদি অন্য কোনো কোডে টাকা আনা যায়, (ডিএসসিসির ব্যয়ের টাকা পরিশোধের জন্য) তাহলে সমস্যার আপাতত আপৎকালীন সমাধান হবে। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য এই ব্যয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোড তৈরি করতে হবে। তারা যে ব্যয় করে তার তুলনায় সরকারের বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তাদের ব্যয়ের টাকাটা তারা চাইছে। তাদের এই সমস্যাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এত বছর পর এবং ই–পেমেন্ট চালুর পর পর ডিএসসিসি কেন এই দাবি তুলেছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তা বলতে পারব না। তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকতে পারে।’

আরও পড়ুন