মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে এলাকাবাসীর জন্য পুলিশের ৭ নির্দেশনা
দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বরে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। শুরুতে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। মেট্রোরেল সেবার প্রথম ট্রেনটি চালাবেন একজন নারী চালক।
এদিকে উদ্বোধনীর দিনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত মেট্রোরেল–সংলগ্ন এলাকার ভবনের বাসিন্দাদের জন্য সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্টোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ।
ডিএমপির সাত নির্দেশনায় বলা হয়েছে—
১.
কোনো ভবন বা ফ্ল্যাটে ২৯ ডিসেম্বরের আগে নতুন ভাড়াটিয়া উঠতে পারবেন না;
২.
কোনো বাণিজ্যিক ভবনে ২৮ ডিসেম্বরে নতুন কোনো অফিস, দোকান, রেস্তোরাঁ খোলা যাবে না;
৩.
২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল–সংলগ্ন কোনো ভবনের বেলকনি ও ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়া যাবে না এবং কেউ দাঁড়াতে পারবেন না;
৪.
ওইসব এলাকার ভবন বা ফ্ল্যাটে ওই দিন কোনো ছবি বা ফেস্টুন লাগানো যাবে না;
৫.
মেট্রোরেল–সংলগ্ন কোনো ভবনের বাণিজ্যিক এলাকার বা আবাসিক হোটেলে ২৮ ডিসেম্বর কেউ অবস্থান করতে পারবেন না;
৬.
আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত এলাকার কোনো ভবন বা ফ্ল্যাটে যদি বৈধ অস্ত্র থাকে, তা ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে হবে;
৭.
মেট্রোরেলের দুই পাশের সব ব্যাংক বা এটিএম বুথ ২৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
মেট্রোরেলে চলাচল
মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা সরঞ্জাম থাকবে, যাকে বলা হচ্ছে কনকোর্স হল। তিনতলায় থাকবে রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে বলে প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাড়া কত
সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই—২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। যাঁরা এখন সর্বনিম্ন এই ভাড়া দিয়ে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নেমে যান, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া কিছুটা বেশিই মনে হবে। আবার যাঁরা রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রাইড শেয়ারিংয়ে চলেন, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া সাশ্রয়ী হবে। কারণ, ঢাকায় এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় স্বল্পদূরত্বেও ১৫০ টাকার আশপাশে ভাড়া দিতে হয়।
যাত্রীর ইচ্ছামতো গন্তব্যে অটোরিকশাচালক যেতে রাজি হন না। অন্যদিকে ঢাকায় রিকশার ভাড়া এখন কমপক্ষে ২০ টাকা। এর বিপরীতে মেট্রোরেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) হবে। ফলে যাতায়াত আরামদায়ক হবে। স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে ডিএমটিসিএল।
কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কিনতে হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রেও কার্ডে টাকা ভরা (রিচার্জ) যাবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী বের হতে পারবেন না। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে। স্টেশনে টিকিট বিক্রির দুটি কাউন্টার থাকবে। এর একটিতে সাধারণ মানুষ টিকিট কিনতে পারবেন। অন্যটিতে কেনার সুযোগ পাবেন শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।