কোলাহলের ঢাকার রাস্তা ফাঁকা, তবে বিপণিকেন্দ্রে ভিড়
ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। অফিস-আদালত সব বন্ধ। ছুটিতে চিরচেনা রাজধানী ঢাকা যেন বদলে গেছে। যানজট, কোলাহল আর ব্যস্ততার এই শহর এখন ফাঁকা, অনেকটাই নীরব। জীবিকার প্রয়োজনে শহরে থাকা মানুষদের অনেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনে চলে গেছেন গ্রামে। এতে নগরীর প্রধান সড়কগুলোয় যানবাহনের চাপ নেই। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোও ফাঁকা হয়ে আছে। তবে শহরের সড়ক ফাঁকা থাকলে শেষ মুহূর্তে কেনাকাটার জন্য বিপণিকেন্দ্রে ভিড় লক্ষ করা গেছে।
আজ রোববার সকালে ও দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, কাকরাইল মোড়, ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ সময়ের তুলনায় রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল খুবই কম। সড়কেও যাত্রীবাহী বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি খুব একটা দেখা যায়নি।
মিরপুর-১০ নম্বরে বিহঙ্গ পরিবহনের চালক সুরুজ মিয়া বলেন, ঢাকায় আর মানুষ নেই, বেশির ভাগই গ্রামে চলে গেছে। মিরপুর-১২ নম্বর থেকে বাস নিয়ে রওনা দিয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত মাত্র ৭ জন যাত্রী বাসে উঠেছেন।
এদিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ও সদস্যদেরও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে তেমন ব্যস্ততা দেখা যায়নি। তাঁদের অনেকেই পুলিশ বক্সের ভেতরে কিংবা মোড়ের কোথাও একসঙ্গে দাঁড়িয়ে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিজয় সরণি মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা। যানবাহনের চাপ একেবারেই নেই বললেই চলে। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে হাত উঁচিয়ে সংকেত দিয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে না।
দুপুর ১২টার দিকে মতিঝিল, পুরানা পল্টন মোড়, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট, শিক্ষা ভবন মোড়, শাহবাগ এলাকায় গিয়েও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে শুধু গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহন দাঁড়াতে হয়েছে। অন্যান্য মোড়ে সিগন্যাল ছাড়াই গাড়ি চলতে দেখা গেছে। ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিলেও যানজট ছাড়াই গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। সাধারণ দিনে এই চিত্র কল্পনাও করা যায় না। দুপুরে বড় সড়কগুলোয় রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে।
মতিঝিলের হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে নিজেদের দোকান খুলে বসেছেন। শাপলা চত্বরসংলগ্ন ফুটপাতের দোকানদার সাগর আলী বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে দোকান খুলেছি। অফিস সব বন্ধ, লোকজন নাই, বেচাবিক্রিও হয়নি।’ সকাল থেকেই মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকা তিনি ফাঁকাই দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
আজ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান, শপিং মল, ফুটপাতের দোকানপাট খোলা হয়েছে কিছুটা দেরি করেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে এসব বিপণিকেন্দ্রে। বেলা পৌনে একটার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার নিউমার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, ধানমন্ডি হকার্স ও নুরজাহান সুপার মার্কেটে লোকজন ভিড় করছেন। মানুষের ভিড়ে নিউমার্কেট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। নিউমার্কেট এলাকা থেকে ওই যানজট নীলক্ষেত মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড ও সায়েন্স ল্যাব মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।
নিউমার্কেটের বাইরে ফুটপাতের দোকানি ফারুক হোসেন বলেন, ঈদের সময় কিছু মানুষ ঢাকায়ই থাকেন। অনেকে আবার ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা, যাঁরা এ শহরেই ঈদ করেন। এমন লোকজনই সাধারণত ঈদের আগের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটা করেন। তিনি আরও বলেন, সকাল ১০টার দিকে দোকান খোলা হয়েছে। সাড়ে ১০টার পর থেকেই মার্কেটে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।