দ্বিধা স্বপ্ন বাস্তবতার নান্দনিক রূপায়ণ

প্রদর্শনী উদ্বোধনের পর ঘুরে ঘুরে শিল্পকর্ম দেখেন অতিথিরা। গ্যালারি কায়া, উত্তরা, ঢাকা, ৩ মেছবি: খালেদ সরকার

‘তালগাছতলায় লোকটি দাঁড়িয়ে আছে ছাতা মাথায়। তালগাছের পাতার ডগা থেকে ঝুলছে চড়ুই পাখির বাসা। সামনে দিয়ে বয়ে গেছে নদী। পাশেই বাঁশের বেড়া দেওয়া খেত, দূরে দূরে ছোট ছোট ঘরবাড়ি। আকাশের নীল জমিন জুড়ে ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘ। তা দেখে মনে হয় শরৎকাল। লোকটি অপেক্ষা করছে নৌকার জন্য।’

নদী মেখলা সবুজ মনোরম বাংলার চিরকালের চেনা দৃশ্যটিই ছবি হয়ে এসেছে শিল্পী চন্দ্রশেখর দের জলরঙের কাজে। উত্তরার গ্যালারি কায়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো তাঁর তৃতীয় একক শিল্পকলা প্রদর্শনী। ‘রিয়েলিটি, ফ্যান্টাসি অ্যান্ড ডিলেমা’ নামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

বিনায়ক সেন বললেন, আপাতদৃষ্টে চন্দ্রশেখর দের কাজ মনে হয় বেশ সহজ-সরল। এটা তাঁর কাজের একটি বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক শিল্পীই তাঁর নিজের প্রকাশভঙ্গি সৃষ্টির চেষ্টা করেন। চন্দ্রশেখর দে তাঁর দীর্ঘদিনের শিল্পসাধনায় আপন বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পেরেছেন। দেখেই বোঝা যায়, এই কাজ তাঁর। তাঁর রেখা আত্মবিশ্বাসী। একরকমের আভিজাত্য, রাজসিকতা, নগরজীবনের রূপকথার মতো কিছু রয়েছে তাঁর কাজের মধ্যে।

শিল্পী চন্দ্রশেখর দে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বললেন, যাপিতজীবনের নানা ঘটনা, পরিপার্শ্ব, প্রকৃতি নিয়েই তাঁর ছবি। যেসব স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি, সেই অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা, ভয়, ভূতপ্রেত, তাবিজ-কবচের মতো লৌকিক বিশ্বাস, দাম্পত্য জীবনের বন্ধন, অল্প কিছু প্রাপ্তির মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া, পরিবারের বন্ধন, বিজ্ঞাপনের মডেল—এই বিষয়গুলোকে তিনি তার নিজের অঙ্কন রীতি ও নান্দনিক ভাবনায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

স্বাগত বক্তব্যে গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বললেন, চন্দ্রশেখর দে নিভৃতচারী শিল্পী। ২৩ বছর পর তাঁর একক প্রদর্শনী হচ্ছে। তবে তিনি নিয়মিতই ছবি আঁকেন। কিন্তু বাড়ি থেকেই সংগ্রাহকেরা তাঁর কাজ নিয়ে যান। প্রদর্শনী করার মতো কাজ জমে ওঠে না। চন্দ্রশেখর দে বহু সময় নিয়ে অত্যন্ত যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে করেন। এই প্রদর্শনী অ্যাক্রিলিক, জল রং, কালি-কলমসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ৬৪টি শিল্পকর্ম রয়েছে।

চন্দ্রশেখর দের পরিচিত তুলে ধরলেন তরুণ শিল্পী শাহানূর মামুন। প্রদর্শনী চলবে ১৭ মে পর্যন্ত, প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা।  

চন্দ্রশেখর দে বাস্তব রীতিতেই ছবি আঁকেন। অ্যাক্রিলিকের শিল্পকর্মগুলোতে দর্শকেরা বৃত্ত, ত্রিভুজ, চৌকোর মতো প্রচুর জ্যামিতিক আকৃতির বিন্যাস দেখতে পাবেন। কালি-কলমের সূক্ষ্ম কাজগুলো প্রথম নজরে এচিং বলে মনে হয়। তাতে ছাপচিত্রের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়েছে। রাতের দৃশ্য, আলো-আঁধারি খুব নান্দনিকভাবে তিনি তুলে এনেছেন এই কাজগুলোতে।