যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ থেমেছে, আহত অনেকে, কলেজজুড়ে ভাঙচুরের চিহ্ন
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষ থেমেছে। সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন।
বেলা আড়াইটার দিকে কলেজটির সামনে সেখানকার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী অবস্থান নেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তখন এলাকায় আর দেখা যায়নি।
এদিকে হামলার পর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে গিয়ে ভাঙচুরের চিত্র দেখা গেছে। কলেজটির ১০তলা ভবনের সব তলায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। লুটপাট করা হয়েছে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও আসবাব।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কলেজে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এরপর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। কলেজের টাকাপয়সাও লুট করা হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বেলা একটার দিকে সেখানে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা প্রথম আলোর প্রতিবেদক সংঘর্ষের সময় সাতজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে যেতে দেখেছেন। এ ছাড়াও এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অনেকে।
দেড়টার দিকে সংঘর্ষ থামার পর বেলা দুইটার দিকে এই প্রতিবেদক কলেজটির ভেতরে ঢোকার সুযোগ পান। এ সময় দুজনকে কলেজ ভবন থেকে আহত অবস্থায় বের করতে দেখেন তিনি। তিনি আরও জানান, তিনি কলেজের একটি কক্ষে তিনজনকে আটকে থাকা অবস্থায় দেখেছেন। তাঁদের কী হয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত জানতে পারেননি তিনি।
এর আগে গতকাল রোববার ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের দিনের হামলার জের ধরে আজ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বিজয় আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল মাহবুবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা এর প্রতিশোধ নিতে এসেছি। মোল্লা কলেজে ঢুকে যা পেয়েছি, তা নিয়ে এসেছি।’
ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দেখা গেছে। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
আহত ১০ জন ঢাকা মেডিকেলে
এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন।
তাঁরা হলেন রানা আহমেদ (১৮), মো. সিফাত (১৮), নাহিদ আলম (২২), তাসরিফ (১৮), শহিদুল ইসলাম (১৯), আবদুর রহমান (১৮), আরাফাত (২২), নোমান (২০), মারুফ (১৮) ও আশিকুল (১৯)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আহত ব্যক্তিদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালে আসা কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ ফেরদৌস বলেন, গতকাল মাহবুবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ভাঙচুর চালান। এর প্রতিবাদে তাঁরা আজ মাহবুবুর রহমান কলেজের সামনে সমবেত হন। সেখানে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।