দূরপাল্লার বাসমালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
দূরপাল্লার বাসমালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে রেলের রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে রেলের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেখানে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে রেলপথকে অতীতের মতো নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রাখতে চায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। কেবল ভাড়া বাড়িয়ে রেল খাতে লাভবান হওয়া বা লোকসান কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করে সমিতি।
এর কারণ হিসেবে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রেল খাত লাভজনক করার ঘোষণা দিয়ে ২০১২ সালে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৭ শতাংশ রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। কিন্তু সে সময় রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে রেল লাভবান হতে পারেনি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলের লোকসান ছিল ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এতে বোঝা যায়, কেবল ভাড়া বাড়িয়ে লাভবান হওয়া বা লোকসান কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
মহাসচিব দেশে পাঁচটি রুটের বাস এবং রেলের ভাড়া ও সময়ে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম তূর্ণা-নিশীথা ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া ছিল ৩৪৫ টাকা। এখন রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পর ৪০৫ টাকা। এই রুটে লোকাল বাসের ভাড়া ৪০০ টাকা, সরাসরি বাসের ভাড়া ৬৮০ টাকা। ট্রেনটির এসি চেয়ারের ভাড়া ছিল ৬৫৬ টাকা, এখন ৭৭৭ টাকা। অথচ এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাসে যেতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা, ট্রেনে সময় লাগে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। ফলে কোনোভাবেই ট্রেনে ভাড়া সাশ্রয়ী নয়। ঢাকা থেকে খুলনা, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড় রুটে বাসের চেয়ে ও ট্রেনের ভাড়াই বেশি বলেন মহাসচিব। এর হিসাব তুলে ধরেন তিনি।
ভাড়া বাড়ানোয় যাত্রীরা রেল বিমুখ হবেন, রেলে টিকিটবিহীন যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে, রাজস্ব আয় কমবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লুটপাটের সুযোগ আরও বাড়বে বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ট্রেনের টিকিট নিয়েও নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ট্রেনের টিকিট যাত্রীদের ১০ দিন আগে কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে বাসের টিকিট তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহসভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, যাত্রীবাহী ট্রেনের রেয়াত সুবিধা (ছাড়) প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৪ মে থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এতে যাত্রীবাহী আন্তনগর, মেইল, লোকাল ও কমিউটার—সব ধরনের ট্রেনের ভাড়া বাড়বে। তবে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে।